ইলিশ মৌসুমে প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও সাগরে যেতে পারছে না জেলেরা 

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-২৯ - ১২:৪৮

মনিরুল হক মনি, বাগেরহাট : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও ইলিশ আহরণে সাগরে যেতে পারছেনা মোড়েলগঞ্জ  ও শরণখোলার জেলেরা। মৌসুমের শুরুতেই সরকার ১৮ মে থেকে পরবর্তী ৬৫ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারী করায় থমকে গেছে সবকিছু। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে হতাশ হয়ে পড়েছেন ট্রলার মালিক ও মহাজনরা।

প্রধান মৌসুম হিসেবে ১৫ বৈশাখ থেকেই ইলিশ আরহণের জন্য জেলেদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু এবছর তাদের সেই আশা শংকায় পরিনত হয়েছে। বুক ভরা হতাশা নিয়ে ট্রলার ঘাটে অপেক্ষা করছেন শত শত জেলে।

এদিকে মৌসুমের শুরুতেই অবরোধ ঘোষণা করায় ফুসে উঠেছে উপকূলসহ বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রীক মৎস্য আহরণকারী সারা দেশের জেলে সম্প্রদায়।

এমন নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলায় আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালিত হলেও রবিবার ২৮ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে সকল জেলে, ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, মহাজনরা একত্রিত হয়েছে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। সেখানে হাজার হাজার মৎস্যজীবী উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মাকলিপি পেশ করবেন। শনিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি ও জাতীয় মৎস্য সমিতির শরণখোলা উপজেলা শাখার নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

  শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী এম সাইফুল ইসলাম খোকন ও মৎস্য আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদার বলেন, সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয় ঘোষিত ৬৫ দিন অবরোধ ঘোষনায় জেলে সম্প্রদায়ে হতাশা নেমে এসেছে। ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, মহাজন সবাইকে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাছাড়া দরিদ্র জেলে পরিবারে হাহাকার শুরু হয়ে যাবে।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পাশের দেশ ভারতে জেলেদেরে কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ থাকবেনা। আমাদের দেশের অবরোধের সুবিধাটা তারাই ভোগ করবে। এমনিতেই তারা বঙ্গোপসাগরে আমাদের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে সারা বছরই মৎস্য আহরণ করছে। আর এই অবরোধের সুযোগে ভারতী জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলিং ট্রলার দিয়ে আমাদের ইলিশ ছেঁকে নিয়ে যাবে তা  কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবেনা। তাই জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার কথা ভেবে সরকারকে এই অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানাই।

বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, একটি ট্রলার সাগরে মাছ ধরার উপযোগী করে পাঠানোর জন্য প্রত্যেক মহাজন ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এমন সময় সরকারের জেলে বিরোধী ঘোষনায় সবাই হতাশ হয়েছে। রবিবার নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদের সারা দেশের মৎস্যজীবীরা বরগুনায় উপস্থিত হয়ে আন্দোলন করবে। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

৬৫দিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় বলেন, এ সময়টাতে ইলিশ, চিংড়িসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পেটে ডিম আসে এবং ডিম ছাড়ে। মূলত মা মাছ রক্ষা এবং মৎস্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া, অন্য দেশের জেলেরা যাতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মৎস্য আহরণ করতে না পারে সে ব্যাপারে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে।