উব্দেগ-উৎকণ্ঠায় শিল্পাঞ্চলের সোয়া ২ লাখ ভোটার

প্রকাশঃ ২০১৮-১২-২৭ - ১৭:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্প শহর খুলনার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সাত মাস আগে কেসিসি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সে সময়ে দশ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক মৃত ভোটারের ভোট পোল হয়। জাতীয় নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, হামলা, মামলা ও পোস্টার ছেঁড়ার পর থেকে উব্দেগ-উৎকণ্ঠা ভোটারদর মধ্যে। আতংক এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে খালিশপুর-দৌলতপুরের শিল্প শহরজুড়ে। বিজিবি নামার পরও উব্দেগ-উৎকণ্ঠা কাটেনি খুলনা-৩ আসনের ভোটারদের মধ্যে। নগরীর খালিশপুর-দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা নিয়ে খুলনা-৩ আসন। নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তন হওয়ায় খুলনা-৪ আসনের দু’টি ইউনিয়ন আড়ংঘাটা ও যোগিপোল তিন আসনে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। গেল পাঁচ বছর ধরে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে আতংক বিরাজ করে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে গায়েবী মামলার পর বিরোধী রাজনীতিকরা অনেকেই এলাকা ছেড়েছে। পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলের খুলনা নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিল বন্ধ থাকায় শ্রমজীবী মানুষ এলাকা ছেড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের তফসীলের পর উৎসবমূখর পরিবেশ একেবারেই অনুপস্থিত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বিভিন্ন সময়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেছেন, তার সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশী চলছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবসহ প্রায় ২০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি’র খানজাহান আলী থানার সভাপতি মীর কায়ছেদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নারী কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক রিটার্ণিং অফিসারের কার্যালয়ে এক অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্লাটিনাম জুটমিল আবাসিক কলোনীতে গণসংযোগ চলাকালে ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কয়েকজন হামলা চালিয়ে তাকেসহ চারজনকে আহত করে। অভিযোগে তিনি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সমজতান্ত্রিক দলের নগর আহবায়ক ও এ আসনের বামগণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী জনার্দণ দত্ত নান্টুর ওপর হামলা হয়েছে বলে জোট অভিযোগ করেছে। রিটার্ণিং অফিসারের কার্যালয়ের সূত্র জানান, খুলনা-৩ আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন- মহাজোট সমর্থিত দশম সংসদের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত রকিবুল ইসলাম বকুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন ও বামগণতান্ত্রিক জোটের জনার্দণ দত্ত নান্টু। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড অনুযায়ী, এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট মোমিন উদ্দিন আহমেদ ৫৯ হাজার ৫০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টির নজরুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ১২ হাজার ১২৫। ১৯৭৯ সালে বিএনপি মনোনীত শ্রমিক নেতা মো. আশরাফ হোসেন ২৪ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ানের প্রাপ্ত ভোট ১৫ হাজার ৭৭০। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মরহুমা অধ্যাপিকা হাসিনা বানু শিরিন ৬৬ হাজার ১৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ানের প্রাপ্ত ভোট ২৫ হাজার ৮৪২। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত শ্রমিক নেতা মো. আশরাফ হোসেন ৩৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ানের প্রাপ্ত ভোট ৩১ হাজার ৫০২। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম ৩৯ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত শ্রমিক নেতা মো. আশরাফ হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৩৭ হাজার ৭৮০। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত শ্রমিক নেতা মো. আশরাফ হোসেন ৭২ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কাজী সেকেন্দার আলী ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৫৫ হাজার ৭৯৭। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ৭৪ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কাজী সেকেন্দার আলী ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৫৮ হাজার ১৭৭। এবারের নির্বাচনে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৬ হাজার ৭০৫। তার মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৬৭ পুরুষ ও ১ লাখ ১০ হাজার ৫৩৮জন মহিলা। ১১৭টি কেন্দ্রের ৪৯৩টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুিষ্ঠত হবে। এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের অভিযোগ, শুরু থেকে এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে আ.লীগ প্রার্থীর অনুসারিরা। এলাকার লোকজনকে ভয় দেখানো হচ্ছে তারা যেন অন্য প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ না নেয়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জয়ী হবে। নির্বাচিত হলে তিনি সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধাসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অনেক বন্ধ মিল চালু করেছে। এবার ক্ষমতায় এলে নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলসহ পাটকলগুলো সংস্কার করা হবে। শিল্পাঞ্চলের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ আবাসিক সংকট নিরসন করা হবে।