খুমেক হাসপাতালে বহিঃবিভাগে নিয়োগপত্র নেই তবুও ওরা টিকিট ক্লার্ক

প্রকাশঃ ২০১৯-১০-২২ - ১০:৩৮

কামরুল হোসেন মনি : ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (বহিঃবিভাগের) ৩য় তলায় টিকিট কাউন্টারে (পুরুষ) সেবা নিতে আসা রোগীরা টিকিট নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ১০ টাকার বিনিময়ে রোগীদেরকে টিকিট দিচ্ছেন দুজন। এদের একজনের নাম মোঃ দিনার ও অপরজন মোঃ বাধন। মনে হবে ওরা হাসপাতালের স্টাফ টিকিট ক্লার্ক। কিন্তু বাস্তবে ওরা হাসপাতালের কেউ নন। নিয়োগপত্র না থাকায় তারা কেনো বেতন-ভাতাও পান না। অথচ বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ টিকিট ক্লার্ক হিসেবে কাজ করছেন। তবে ওদের মধ্যে মোঃ দিনারের বাবা ওই হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় মোঃ কবির হোসেন। মোঃ বাধনের পিতা মোঃ হাসান-উজ্জামানও একই পদে কর্তরত।
অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় মোঃ কবির হোসেন ও মোঃ হাসান-উজ্জামান সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তারা দায়সারা কাজ করেই হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের দাপট দেখাতে ব্যস্ত থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় কারণে দিনের পর দিন ক্ষমতা অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম করলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। খুমেক হাসপাতালে গত কয়েকদিনে সরেজমিনে ঘুরে নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ওইখানে (টিকিট কাউন্টারে) কারা কাজ করছেন আমার জানা নেই। তবে দুইজন ওয়ার্ডবয় ওখানে দায়িত্বে রয়েছে এটা আমি জানি। তবে ওদের পরিবর্তে অন্য কেউ কাজ করছে বলে আমার জানা নেই। আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি, এসেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে জনবল সঙ্কট থাকার কারণে অনেকে ফ্রি সার্ভিস হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত মাসে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠনের কাছে বহিঃবিভাগ থেকে কালো বাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। ওই টিকিট কালোবাজারে ১শ টাকায় বিক্রি করা হতো।
জানা গেছে, খুমেক হাসপাতালে মোঃ কবির হোসেন ওয়ার্ডবয় হিসেবে ১৯৯২ সালের ২৮ মে এ হাসপাতালে যোগদান করেন। ২৭ বছর ধরে একই হাসপাতালে চাকরিরত। স্থানীয় হওয়ায় নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে জাহির করেন। ওয়ার্ডবয় হয়েও কোনো নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে না থেকে সর্বত্র রয়েছে তার বিচরণ। তার ছেলে মোঃ দিনারকে টিকিট কাউন্টারে ৪-৫ বছর ধরে কাজ করাচ্ছেন। বহিঃবিভাগের টিকিট কাউন্টারে ওয়ার্ডবয় মোঃ হাসান-উজ্জামানের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু তিনি নিজে না এসে তার ছেলে মোঃ বাধনকে বসিয়ে কাজ করাচ্ছেন। তিনি হাজিরা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পায়চারি করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক স্টাফ জানান, ওয়ার্ডবয় মোঃ কবির হোসেন চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন স্টাফদের রোস্টার পরিবর্তন করে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা দাবি করেন। ফ্রি সার্ভিসে যেসব পুরুষ ও মহিলারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা দাবি করেন। তা না হলে হাসপাতালে ফ্রি সার্ভিস হিসেবে কাজ করতে দিবেন না এমনও হুমকিও প্রদান করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। বাধ্য হয়ে তাকে গোপনে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, খুমেক হাসপাতালে গুরুত্বপর্ণ বিভাগে ফ্রি সার্ভিসদের কাজে দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে রোগীদের ওষুধ চুরি, সরকারি ওষুধ সাপ্লাই থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে রোগীদের ওষুধ কিনে আনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ফ্রি সার্ভিম টিটো নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী রোগী অভিযোগও দিয়েছেন। অবশ্য কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, অর্থোপেডিক্স বিভাগ, চর্ম বিভাগ, দন্ত বিভাগ, ইএনটি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে ফ্রি সার্ভিসরা নিয়োজিত রয়েছে। এদের কতিপয় ফ্রি সার্ভিস হাসপাতালের কতিপয় স্টাফ ও কর্মকর্তার যোগসাজসে নানা অনিয়ম করে আসছেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোঃ আতাউর রহমান বলেন, মোঃ কবির হোসেন ও মোঃ হাসান-উজ্জামান দুইজনই হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। বহিঃবিভাগের টিকিট ক্লার্ক পদ থাকলেও পদ শূন্য রয়েছে। যার কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও নার্সরা (বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে) টিকিট কাউন্টারে বসেন। হাসপাতালে কোন ধরনের নিয়োগ ছাড়াই বহিঃবিভাগের টিকিট কাউন্টারের টিকিট বিক্রি করছেন কিভাবে এর কোন জবাব দিতে পারেননি।