খুলনার বাজারে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব

প্রকাশঃ ২০২০-০২-২৯ - ১৯:০৯

আজগর হোসেন ছাব্বির : করোনা ভাইরাসের কারনে চীন থেকে পণ্য আমদানী বন্ধ রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুলনার বাজারে। চায়নার প্রতিটি পণ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। তাই এ সব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
বিশ^ অর্থনীতির জন্য একটা বড় ধাক্কা করোনা ভাইরাস। ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্নখাতে চীন যেমন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন, তেমনি এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে একদিকে যেমন আসছেনা কোন মূলধনী সরঞ্জাম, তেমনি আসছেনা কোন শিল্পের কাঁচামাল। শেষ হয়ে আসছে চীন থেকে আমদানীকৃত টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ফ্যান, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলসহ সকল ধরনের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্য-সামগ্রীর দেশীয় মজুত। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত বা বাজারজাতকৃত অনেক আন্তর্জাতিক ব্যান্ড এর বাংলাদেশে রিজার্ভকৃত কম্পিউটার মোবাইল টিভি এসি ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক সামগ্রী সরবরাহে মারাত্বক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। কারণ ওই সকল ব্র্যান্ডের অনেক সহযোগী কারখানা চীনে অবস্থিত। তারই ফলশ্রুতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনের কারখানাগুলো একের পর এক বন্দ হয়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে ১০০% চায়না নির্ভর ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর জলিল টাওয়ার, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, ডাকবাংলা সুপার মার্কেট, এস, এম, এ রব শপিং কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মার্কেট ঘুরে এমন অবস্থা দেখা গেছে। জলিল টাওয়ারের এন এন্ড কম্পিউটারের প্রোপাইটার সুমিত কুমার ঘোষ বলেন, মাদার বোর্ড, মনিটর, হার্ডডিক্স, র‌্যাম, প্রসেসর, কি বোর্ডসহ কম্পিউটারের সকল সামগ্রী চায়না থেকে আমদানী করা হয়। করোনার প্রভাবে গত ১ মাসের ব্যবধানে প্রতিপিচ হার্ডডিক্সের দাম ৩ থেকে ৭ শ’ টাকা, র‌্যামে ৮ থেকে ৯ শ’ টাকা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। একই মার্কেটের নিউ বেষ্ট ওয়ে কম্পিটারের মালিক সঞ্জয় গোলদার জানায়, গত ১ মাসের ব্যবধানে প্রতিপিচ মাদারবোর্ড ৪ থেকে ৬ শ’ টাকা, প্রিন্টার ৫ শ’ থেকে হাজার টাকা দাম বেড়ে গেছে। অস্বাভাবিক এই মূল্য বৃদ্ধির কারনে বর্তমানে বেচাকেনা অর্ধেকের নীচে নেমে গেছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে এমন দাবী তাদের। মূল্য বৃদ্ধির জন্য তারা পাইকারী ডিলারদের দায়ী করে বলেন আমদানী বন্ধ থাকায় ষ্টক সীমিত হয়ে আসছে। ডিলারদের কাছে যে পণ্য সামগ্রী মজুদ আছে তারা সেটা এই মুহুর্তে বাজারে ছাড়তে চাইছেনা। খুলনা শপিং কমপ্লেক্স এবং রব শপিংয়ে মোবাইল বাজার ঘুরে অনুরুপ অবস্থা দেখা যায়। ডাকবাংলা সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক বাজার ঘুরে দেখা যায় চীন নির্ভর সকল পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। খুরশীদ ইলেকট্রিক হাউজের ম্যানেজার টুটুল জানায়, পি আই বি টেপ ২ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬০ টাকার স্থলে ১৯০ টাকা, তিশা টেপ ২৪০ এর স্থলে ৩০০ টাকা প্রতি ডজনে বেড়ে গেছে। কলিংবেল, সুইচ, এম সিভি চ্যানেল, তারসহ সকল ইলেকট্রিক মালামালের সরবরাহ না থাকায় অনুরুপ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ অতিরিক্ত মুনাফার লোভে চীন থেকে আমদানী বন্দ থাকবে এমন গুজব ছড়িয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের কৃত্তিম সংকট তৈরী করছে। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সাময়িক এই সংকটকে পুঁজি করে অধিক মুনাফার পায়তারা করে ক্রেতা সাধারণ এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারী কামনা করেছে।
খুলনা কম্পিউটার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরদার মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ফেব্রুয়য়ারী মাসে চায়না মার্কেট লম্বা ছুটিতে থাকে। তাই ব্যবসায়ীরা আগে থেকে এলসি করে থাকে। এই মুহুর্তে কম্পিউটার সামগ্রীর দাম তেমনভাবে বাড়েনি। কিন্তু মেমোরী সম্পর্কীত পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে দ্রুত করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলে আমাদের আইটি সেক্টরসহ ইলেক্ট্রনিক্স বাজার মারাত্বক ক্ষতির সন্মুখীন হবে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী আমিনুল হক চায়না পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চীন সংঘবদ্ধ একটি জাতি। তারা তাদের নিজ স্বার্থে এই সংকট থেকে উত্তরনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তবে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে সকল ধরনের আমদানী পণ্যের যথেষ্ট পরিমান মজুদ আছে। সুতরাং অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, শুধুমাত্র আমদানী নয়, বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানীযোগ্য বিভিন্ন পণ্য রপ্তানীতেও ভাটা পড়েছে।
মূলত দুই ধরনের ক্ষতির সন্মুখীন হবে বাংলাদেশ। একটি অবকাঠামোগত উন্নয়নে। অন্যটি উৎপাদনগত উন্নয়নে। করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে পণ্য ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের বাইরে চলে যাবে। ফলে মুদ্রাস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। যা আগামী বাজেটে বড় প্রভাব ফেলবে। এর আগে চলতি অর্থ বছরে যে সংশোধিত বাজেট আসবে সেখানে আমরা একটা বড় ধরনের সংশোধন দেখতে পাবো। সরকার এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।