খুলনার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্জীবীত হচ্ছে পদ্মা সেতুর ছোয়ায়

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-১৬ - ১৬:১৭

বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা: পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। সোয়া কোটি টাকারও বেশি ব্যায়ে খুলনার দু’টি গুরুত্বপূর্ন সংযোগ সড়ক নির্মান প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত মংলা বন্দরে ক্রমেই গতিশীলতা আসছে। খুলনার দু’টি উপজেলা এখন ঘোষিত অর্থনৈতিক জোন। খুলনা মংলা রেললাইনের কাজ চলছে দ্রুত। আর আধুনিক রেল ষ্টেশন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। খুলনা সাতক্ষীরা শ্যামনগর সুন্দরবন সড়ক এবং খুলনা নলিয়ন সুন্দরবন সড়ক নির্মানের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল আবারও ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় জোন হিসেবে নয়া রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। বিনিয়োগকারীরা আবারও ফিরে আসছে এ অঞ্চলে। এ জনপদ এখন পদ্মার এপারের এক সম্ভাবনাময় বাণিজ্যের নতুন চালিকা শক্তি। মরা গাছে ফুল ফোটার মতই ভঙ্গুর অর্থনীতি যেন প্রান ফিরে পাচ্ছে। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নে এ অঞ্চল হয়ে উঠবে ফুলে ফলে সুশোভিত। এমন ভবিষ্যত বাণী করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চল বিগত বিভিন্ন সরকারের আমলে বিমাতাসুলভ আচারণের শিকার। পাট শিল্প ও শিল্প কারখানা অধ্যুষিত এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পিতভাবে ভেঙ্গে দেয়া হয়। গত এক যুগে একের পর এক শিল্প কল কারখানা বন্ধ হতে থাকে। শিল্প সেক্টরে শুরু হয় নৈরাজ্য। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে মৃত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও আমজনতার প্রাপ্তি যথেষ্ট নয়। তথাপি পদ্মাসেতু এখন সূর্যের মত বঞ্চিত এই জনপদকে আলোকবর্তিকা ছড়ানোর অপেক্ষায় যেন অপেক্ষমান। খুলনায় দুইটি সংযোগ সড়ক (নিরালা এভিনিউ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এভিনিউ) নির্মাণ প্রকল্পে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এ সম্পর্কে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খুলনা শহর যেহেতু দিন দিন বড় হচ্ছে সে জন্য পুরো শহরকে সংযোগ সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর উন্নয়নের পূর্ব শর্ত মংলা বন্দর ফুলে ফলে সুশোভিত হবে এমন প্রায়সই চলছে। নেপাল ও ভুট্রান মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলযোগে পন্য আমদানী ও রপ্তানী করতে পারবে। সে লক্ষ্যে শিগগিরি ভারত বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মান কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে দ্রুত। এছাড়া শেষ পর্যায়ে খুলনার আধুনিক রেলষ্টেশনের নির্মান কাজ। স¤প্রতি  খুলনায় সফরকালে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতলকে দ্রুত পূর্নতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। সাথে সাথে এগিয়ে চলছে ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ। যার ফলে খুলনাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে যাবে পানি। সবমিলিয়ে খুলনার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্জীবীত হচ্ছে। সূত্রমতে, খুলনার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পদ্মা সেতু হবে ভবিষ্যতের মাইল ফলক। সেতুর কাজ এখন দৃশমান। ফলে ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখাচ্ছে। খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের কাজ যাতে যথাসময়ে সমাপ্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্পকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি কাজ করতে গিয়ে অন্যটির যাতে কোন ক্ষতি না হয় কিম্বা অযথা সময় ক্ষেপন না হয় সে দিকটি মাথায় রেখেছে প্রকৌশলীরা। রেল সেতু, রেল লাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং এই তিন ভাগে বিভক্ত করে প্রায় ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র খুলনা থেকেই ৪০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে । এছাড়া মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩ একর এবং বাগেরহাট জেলা থেকে ২৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে খুলনা মহানগরীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি যখন পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন হবে তখন এই রেললাইনকে ঘিরে এ অঞ্চল হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ন ইকনোমিক জোন। এদিকে, এক সময়কার শিল্প ও বন্দর নগরী বলে খ্যাত খুলনার জৌলুষ ফিরিয়ে আনতে খুলনায় দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত করতে পারলে তা আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখবে। বেজা এ লক্ষ্যে খুলনার বটিয়াঘাটার তেতুলতলা এবং তেরখাদার কোলাকে বেছে নিয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ ছাড়াও এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর এর সাথে যুক্ত হবে আর্শীবাদ হিসেবে পদ্মা সেতু। এছাড়া, খুলনার বাগেরহাটে রামপাল উপজেলার ফয়লাহাটে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার উন্নয়নের পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতির চাকা। মংলা বন্দরসহ সারা বছরই গোটা সুন্দরবনও থাকবে দেশি বিদেশী পর্যটকে মুখরিত । পর্যটন খাতে প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে  জানান এখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা ।