খুলনায় জুসের বোতলে আসছে ফেন্সিডিল!

প্রকাশঃ ২০২০-০১-০২ - ১৬:০৯

কামরুল হোসেন মনি : প্রতিনিয়ত অভিনব কৌশলে ব্যবহার করে অব্যাহত রাখা হচ্ছে মাদক চোরাচালান। বিশেষ করে থার্টিফাস্ট নাইটকে উপলক্ষে বেনাপোল ও সাতক্ষীরার সীমান্ত দিয়ে জুসের মধ্যে পাচার হয়ে খুলনায় ঢুকছে ফেনসিডিল চালনা। গত সোমবার খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দাশাখার টিম নগরীর ইসলামপুর রোডে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জুসের বোতলে করে খুলনায় ফেনসিডিল আসার চালানটি আটক করেন। এ সময় গৌতম কুমার শীল (৪৬) নামে এক ফেন্সিডিল ব্যবসায়ীকে আটক করেন। তার কাছ থেকে ছোট-বড় ১২টি জুসের বোতলে আনা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। যার পরিমান ৬ লিটার। অপর আসামী পরাগ চৌধুরি (৪৪) অভিযানে টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদক বিরোধী জোরদারকরন ও অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনে সহকারি পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে ১৫ সদস্য মাদক বিরোধী অভিযানের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সূত্র মতে, সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্ববধানে গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার দুপুরে নগরীর ইসলামপুরে রোডে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ শীলের পুত্র গৌতম কুমার শীলকে আটক করেন। এ সময় তার বাসায় তল্লাশী চালিয়ে খাটের নিচের থেকে প্লাষ্টিক জুসের ১২টি ছোট বড় বোতলের মধ্যে ফেনসিডিল পাওয়া যায়। যার পরিমান ৬ লিটার।
গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার বলেন, অভিনব পন্থায় থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে মাদক চোরাকারবারীরা মাদকের চালান খুলনায় নিয়ে আসছেন। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, আটক গৌতম কুমার শীল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় এই চালানটি পরাগ চৌধুরী তাকে জুসের মধ্যে করে দিয়ে নিয়ে আসে। তার এখান থেকেই জুসের বোতলে করে ফেনসিডিল বিভিন্ন স্থানে পৌছায় দেওয়া হয়। অপর আসামী পলাতক পরাগ চৌধুরীকে এর আগে ২০১৭ সালে  মাদকসহ তাকে একবার আটক করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, আইনের চোখ ফাকি দিয়ে বিভিন্ন পন্থায় মাদকের চালান খুলনায় ঢুকছেন। থার্টিফাস্ট নাইটকে সামনে তার দপ্তর থেকে মাদক বিরোধী অভিযানের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আজ ৩১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১ জানুয়ারী পর্যন্ত লাইসেন্সকৃত বার ক্লাব, দেশীয় মদের দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। থার্টিফাস্টনাইট উপলক্ষে বিশেষ টিম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সতর্কতামুলক অবস্থা থাকা ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। দিন-রাত বিশেষ টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছেন।
আটক গৌতম কুমার শীল এ প্রতিবেদককে জানান, এর আগে পরাগের মাধ্যমে চলতি মাসে ভারত থেকে আসা জুসের মধ্যে ফেনসিডিল আনা চালানটি তার কাছে দিয়ে যায়। বড় জুসের বোতলে লুকিয়িড ফেনসিডিল এক লিটার ধরে। তার কাছ থেকে একজন এসে নিয়ে যায়। বড় বোতল নিয়ে গেলে তাকে ৪শ’ টাকা এবং ছোট বোতল নিয়ে গেলে প্রতি বোতলে ১শ’ টাকা করে পাইতেন। এর আগের চালানটি ফেনসিডিল বিক্রি হয়ে গেছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীল সূত্র মতে, খুলনাঞ্চল ভারতের সীমান্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের মৌসুমি ফল তরমুজ, কাঁঠাল, লাউ, কুমড়ার ভেতর ঢুকিয়ে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। ছোট-বড় নানা যানবাহনে করেও বিভ্ন্নি কৌশলে ভারত থেকে মাদক আসছে। যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে মাদক পাচারের ধরন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার হাতে হরহামেশা মাদকের চালান ধরা পড়লেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূলহোতারা। আর মাদকসহ যারা ধরা পড়ছে, তাদের অধিকাংশই বহনকারী। যারা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বহন করছে সর্বনাশা এসব মাদক।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর গত দুই মাসে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০৭ টি অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময়ে মোট মামলা হয় ৫৪টি আসামী আটক করা হয় ৫৪ জনকে। অভিযানের সময় ১৩ কেজি, ইয়াবা ১২৫ পিস ও ফেন্সিডিল ১৫৩টি জব্দ করা হয়।