খুলনায় বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধসহ আটক ১

প্রকাশঃ ২০২০-০১-১৪ - ১৯:০১

সাবরিনা বিনতে মাহবুব : নগরীতে মিস্ত্রিপাড়া পশ্চিম লেনে খুলনা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ ও বিভিন্ন কোম্পানির খালি প্যাকেট ও ওষুধের ফুয়েল (প্যাকেজিং) সহ মোঃ আল মামুন আকন্দ (৩৮) নামে এক ওষুধ বিক্রেতাকে আটকের পর আরও একজনকে আটক করেছেন পুলিশ। আটককৃত হচ্ছে মুনসুর উল ইসলামের পুত্র আব্দুল্লাহ আল হাই হাদী (৪০)। গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরীর বাগমারা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। নকল ওই সব ভেজাল ওষুধ আটকের পর নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে পুলিশ মুখ খুলছেন না। খুলনায় একাধিক ব্যক্তি এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ ও বিভিন্ন একাধিক সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল আলম বলেন, ওই মামলার তদন্তে আব্দুল্লাহ আল হাই হাদীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা (৩৮)কে গ্রেফতারের জন্য তাদের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রখেছেন। আটককৃত হাদীকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ওই চক্রের সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তারা এখন অনেকেই গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এজাহারভুক্ত অপর আসামি মোঃ হারেজের পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা। তাকে ধরতে সেখানেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নগরীর হেরাজ মার্কেট থেকে ইউনানী ও হারবালের বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধসহ হাতেনাতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আটক হয়। থানায় এ বিষয়টি নিয়ে পৃথক দুটি অভিযোগ দিলেও পরবর্তীতে একটি বিশেষ মহলের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় অভিযোগকারীরা। তৎকালীন সদর থানার এসআই মোঃ আশরাফুল আলম বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় দুজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে একজন ওই দিন অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। দ্বিতীয় তলা মসজিদের সামনে সাইনবোর্ড বিহীন একটি ফার্মেসির মোঃ নাসির দীর্ঘদিন ধরে ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও গুড হেলথ কোম্পানির হারবাল ও ইউনানী ওষুধ নকল তৈরি করে নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসি ও গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ করে আসছিলেন। ঘটনার দিন দুপুরে ওই ফার্মেসির মালিক নাসিরকে গুড হেলথ কোম্পানির ইউনানী ওষুধ লোমাটন ও নুভেপ্য এবং ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ইউনানী হাইসোক্যাল ও হারবালের আইভেরি ওষুধগুলো নকল তৈরি করে সরবরাহ করার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। অভিযুক্ত নাসির ওই সব কোম্পানির ওষুধ নিজে ঘরে বসে ওষুধের লেবেল, স্টিকার তৈরি করে পটের মধ্যে নকল ওষুধ ভরে বাজারে সরবরাহ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে নাসিরের স্বীকারোক্তিকে নগরীর ময়লাপোতা, গল্লামারী ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মোট তিনটি ফার্মেসি থেকে ওই দুই কোম্পানির ওইসব নকল ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়। এরপর হেরাজ মার্কেটের কমিটি ও বিসিডিএস এর কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারা ওই দিন সভায় নাসির ফার্মেসিকে আজীবন বন্ধ ঘোষণা ও জরিমানা করেন। এর আগে ওই দুই কোম্পানির খুলনার প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির ওষুধ নকল ও ভেজাল উদ্ধার বিষয়ে সদর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার জিডি নং ১৪৭৮-২৫/০৪/১৮ অপরটি হচ্ছে ১৪৭২-২৫/০৪/১৮। বিষয়টি স্থানীয় তৎকালীন ড্রাগ সুপারকে অবহিত করা হয়। ওই সময় হেরাজ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার শীব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই ফার্মেসি আজীবনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত নাসির পালিয়ে থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু দেখা গেছে কয়েক মাস যেতে না যেতেই ওই অভিযুক্ত নাসিরকে পুনরায় দোকান খোলার অনুমতি দেন মার্কেট কমিটি।
উল্লেখ্য, গত রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে খুলনা থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নকল বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ, খালি প্যাকেট ও ওষুধের ফুয়েল (প্যাকেজিং) সহ মোঃ আল মামুন আকন্দকে আটক করেন। এ ঘটনায় মামলায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়।