খুলনায় মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্রের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১৯ - ১২:৫০

থানায় ভুক্তভোগীর অভিযোগ

কামরুল হোসেন মনি : নগরীতে মাদক নিরাময় চিকিৎসা কেন্দ্র চলছে অবৈভাবে সাথে অপচিকিৎসা শীর্ষক শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কথা নামক মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নির্যাতনের শিকার এক ভুক্তভোগী মোঃ মফিজুর রহমান লাইজুকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেছেন। রোববার এ ব্যাপারে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী খালিশপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
কথা মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন শামীম বলেন, ডাঃ শিহাব শাহরিয়ার নামে আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছিলেন। তিনি তার রোগীদের দেখতেন। ওই হাসপাতালে ওই নামে কোন চিকিৎসক নেই এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগে ছিলো এখন তিনি বদলি হয়ে গেছেন। নাম ব্যবহার করার প্রসঙ্গ জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বর্তমানে তার ওইখানে ডাঃ দীপ কুমার দাস নামে একজন চিকিৎসক নিয়মিতভাবে সময় দেন।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ডাঃ শিহাব শাহরিয়ার নামে কোন চিকিৎসক আমার হাসপাতালে এখন নেই। এই হাসপাতালে না থেকেও যদি কেউ নাম ব্যবহার করে তাহলে সেটি অপরাধ।
খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসক ডাঃ দীপ কুমার দাস বলেন, ডাঃ শিহাব শাহরিয়ার নামে একজন এইচএমও ছিলেন। সে এক মাস আগে ঢাকায় বদলি হয়ে গেছে। কথা নামক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র মাত্র একদিন গেছি, এক রোগীকে দেখতে। আমি ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বসে রোগী দেখি না।
খুলনা বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের নামে আমরা কোন লাইসেন্স প্রদান করিনি। শুধুমাত্র লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র খোলার আবেদনকারী নিয়ম অনুসারে শর্তগুলো পূরণ না করলে বা আবেদনের সাথে পরিপূর্ণ কাগজপত্র না দিলে ওই প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স পাবে না। লাইসেন্স পাওয়ার আগে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে লাইসেন্স তো পাবেই না, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার এ এম কামরুল ইসলাম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কথা মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্রের নির্যাতনের শিকার মোঃ মফিজুর রহমান লাইজু বলেন, তিনি কোন মাদকাসক্ত ছিলেন না। কথা নামক ওই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের রিকোভারি হিসেবে পরিচয়দানকারী খলিল, মোঃ জাকিরসহ কয়েকজন তাদের জমিজমা সংক্রান্ত কথা বলে চা খাওয়ার নামে চায়ের দোকানে নিয়ে আসেন। এ সময় একজন আমার চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমদিন আমাকে বাথরুমের পাশে থাকতে দেন। নেই কোন আলাদা বেড। নিচে ঢালাই বিছানায় এক সাথে ১৫-২০ জনকে ঘুমাতে দেয়। অনেকে আছে কোন নেশাদ্রব্য দূরে থাক, সিগারেটও পর্যন্ত পান করেন না। তাদের একজনকে এখানে আটক করে রাখেন। নেই কোন চিকিৎসক। ওইখানে যাওয়ার পর আমাকে তারা একটি ওষুধ খেতে বলে। ওই ওষুধ খাওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আর গলা দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। আমাকে ওই জায়গায় আটক করে রেখেছিলো আমার স্ত্রী মিষ্টিও জানতোনা। যখন আমার স্ত্রী থানায় আমার নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ দিতে যাবে তখন বিষয়টি জানাজানি হয়। লাইজু বলেন, তারা মনে করেছে ওই সব গোপন তথ্যগুলো আমি সাংবাদিককে সরবরাহ করেছি। এই ভেবে ১৮ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কথা মাদকাসক্তি নিরাময় চিকিৎসা কেন্দ্রের নিরাময় কেন্দ্র রিকভারি হিসেবে দায়িত্বরত মোঃ জাকির, রিয়াদ সরদার, মোঃ মোসলেম, মোঃ খলিল ও মোঃ ইমরান আমাকে মোটরসাইকেলে ঘিরে দাঁড় করিয়ে বলে, তুই যা খাওয়ার খেয়ে নে, তুই সাংবাদিককে সব প্রকাশ করে দিছিস। তোর আর রক্ষা নেই। এই বলে দ্রুত চলে যায়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই শাহ আলম বলেন, মফিজুর রহমান লাইজু নামে এক ব্যক্তিকে কয়েকজন হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।