খুলনায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ 

প্রকাশঃ ২০১৮-১০-২০ - ১৮:০৬

তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি খুলনায় ঘুরে গেলেন

কামরুল হোসেন মনি : খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক ও কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুজাত আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগের বিষয় তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি খুলনায় অনেকটা গোপনে তদন্তে করে গেছেন। এদিকে তদন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিভিল সার্জন বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট দৈনিক প্রবাহ পত্রিকায় একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সিভিল সার্জন দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেন।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে তদেন্ত ডিজি অফিসের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি খুলনায় আসেন। গত আগস্ট মাসে শেষের দিকে এই কমিটি খুলনায় অবস্থান করেন। তদন্তে এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, যুগ্ম সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (নির্মাণ শাখা) এই সব পদে থাকা তিনজন কর্মকর্তা এ তদন্ত করতে আসেন।
গত আগস্ট মাসে কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মালিক মোঃ আলমগীর হোসেন লিখিতভাবে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজি) এর লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এর ববারবর সিভিল সার্জন ও কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুজাত আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগটি দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমরা হাসপাতালের সমস্ত অধিদপ্তরে লাইসেন্স ও সরকারি সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলা সত্ত্বেও কয়রায় বেআইনীভাবে যে সমস্ত ক্লিনিক চলছে তাদের মতো আমাকে মাসোহারা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। আমি দিতে অস্বীকার করলে সিভিল সার্জনের রোষানলে পড়ি আমি এবং আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন। ওদিকে বেআইনীভাবে চলা ক্লিনিকগুলো মাসোহারার মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কার্যক্রম।
মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক ডাঃ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন গত ২৭ আগস্ট খুলনার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবদেককে বলেছিলেন, এ অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য সহকারী পরিচালক রয়েছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে গঠিত তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গঠিত তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক ডাঃ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনকে বিকেলে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার বিরুদ্ধে আসা তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেননি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে গত ৩ জুলাই পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামের ওয়াচকুুরুনীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (২২) সন্তান প্রসবের জন্য কয়রার সাগর নার্সিং হোমে ভর্তি হয়। এখানে অদক্ষ লোকদ্বারা ডেলিভারী করলে প্রসূতির একটি কন্যা সন্তান হয়। পরবর্তীতে সন্তান প্রসবের জটিলতা দেখা দিলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা প্রসূতিকে পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি করলে চিকিৎসার অভাবে সেখানে প্রসূতি আনোয়ারা খাতুন মারা যান। এ অভিযোগের ভিত্তিতে পাইকগাছা ও কয়রার দুটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আব্দুর রাজ্জাক পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক ও কয়রার সাগর নার্সিং হোম এর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আতিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। নির্ধারিত সময়েই তদন্ত রিপোর্ট সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্টে দুই ক্লিনিককে শাস্তির সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু তদন্ত রিপোর্টের শাস্তির সুপারিশ উপেক্ষা করে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক পুনরায় চালুর অনুমতি দেন। কয়রার সাগর নার্সিং হোম ক্লিনিক সিভিল সার্জনের দাবিকৃত টাকা পূরণ না করায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক স্থানীয় এমপির সুপারিশ ছিলো বলে তিনি ওই সময় উল্লেখ করেছিলেন