খুলনা-৫ আসনে হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে ঘর ছাড়া বিরোধী দলের সমর্থকরা

প্রকাশঃ ২০১৮-১২-২৭ - ১৭:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের নির্বাচনী এলাকায় গত পাঁচ বছরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের নামে হামলা-মামলা হয়নি। ইফতার মাহফিল, ঈদ ও পুঁজায় সকল দলের নেতা-কর্মীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দেখা গেছে। তফসীল ঘোষণার পর থেকে হামলা-মামলা ও গ্রেফতার চলছে অহরহ। আগুন দিয়ে নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য সাজানো মামলায় হয়রাণি হচ্ছে বিরোধী শিবিরের সমর্থকরা। ভিন্নমতের ভোটারদের ঘর ছাড়া হওয়ার হুমকি দিচ্ছে সরকার সমর্থক রাজনীতিকরা। এমন চিত্র খুলনা-৫ আসনের। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমে প্রতিমন্ত্রী, পরে পূর্ণ মন্ত্রী’র মর্যাদা পান। গত পাঁচ বছরে বিরোধী শিবির থেকে প্রতিপক্ষকে ঘাঁয়েল করার জন্য সাজানো মামলার কথা শোনা যায়নি। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিরোধী শিবিরে আতংক চলছে। ইতোমধ্যেই ২০ দলীয় জোটের সমর্থক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন। এ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা দৌলতকে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার স্বামী যুবদল নেতা সরদার দৌলত হোসেনকে গায়েবী মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ফুলতলা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করা হয়েছে। এ আসনে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার সংবাদপত্রে প্রদত্ব খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন, তফসীল ঘোষণার পর এ নির্বাচনী এলাকার ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় ৫টি সাজানো মামলায় ১৬১ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৭৬জন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। পুলিশের যোগসাজসে ককটেল ফাটনো, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ও গাড়ীতে আগুন দিয়ে ২০ দলের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। খোলা চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনগণের আশা-আকাংখা পুরণে অতিতের মত ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সকল বাঁধা মোকাবেলা করে ধানের শীষের পক্ষে নিরব বিপ্লব হবে বলে তিনি আশাবাদী। মহাজোট মনোনীত প্রার্থী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়া উপজেলার জিলেরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মতবিনিময় সভায় বিরোধী দলের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন , ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেয়ে নৌকা প্রতিকে ভোট দিয়ে আসবেন। দেশবিরোধী ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের অপতৎপরতা চিরতরে বন্ধ করতে ভোটারদের নৌকা প্রতিকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচিত হলে দেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আলী মনসুরের অভিযোগ, সরকারি দলের কর্মীরা পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০ দলের প্রার্থীকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এ আসনের অন্যান্য প্রার্থীরা হচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম ও সিপিবি’র চিত্ত রঞ্জণ গোলদার। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩৪জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ পুরুষ এবং ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০জন মহিলা। ১৩০টি কেন্দ্রের ৬৪৪টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. এনায়েত আলী সানা ৮১ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাপের গাজী শহিদুল্লাহ’র প্রাপ্ত ভোট ১৪ হাজার ৪৮৯। ১৯৭৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সালাহউদ্দিন ইউসুফ ৩৮হাজার ৬৬৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমীর আলী জোয়ার্দারের প্রাপ্ত ভোট ২৭ হাজার ৪৫৭। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লে. কর্ণেল এইচ এম এ গফ্ফার, বীর উত্তম ৮০ হাজার ৮৪৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সালাহউদ্দিন ইউসুফেল প্রাপ্ত ভোট ৩৪ হাজার ৬৭৬। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লে. কর্ণেল এইচ এম এ গফ্ফার, বীর উত্তম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সালাহউদ্দিন ইউসুফ ৬৩ হাজার ২১১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অধ্যাপক মাজিদুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৩৩ হাজার ২৩৯। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সালাহউদ্দিন ইউসুফ ৭০ হাজার ১৮৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অধ্যাপক মাজিদুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৪৫ হাজার ৫৮৪। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত অধ্যাপক মিয়া গোলার পরোয়ার ১ লাখ ৫ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দের প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ১ হাজার ১৯২। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীল মনোনীত নারায়ন চন্দ্র চন্দ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬শ’ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামের অধ্যাপক মিয়া গোলার পরোয়ারের প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৫ হাজার ৩১২।