ঠাকুরগাঁওয়ের শীতকালীন সবজি যাচ্ছে দেশের বাইরে

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-১৯ - ১৬:৫৫

জয় মহন্ত অলক, ঠাকুরগাঁও : শীত আসার আগেই উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম শীতকালীন সবজি। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও করলা, লাউ, মূলা, শসা, চিচিঙ্গাসহ এসব সবজির ভালো ফলন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

ফলে আগাম সবজির বাণিজ্যিক চাষ, উৎপাদন ও বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক-শ্রমিকসহ অনেক খেটে খাওয়া মানুষ।

সরেজমিনে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সবজি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মরিসাস সহ বেশ কয়েকটি দেশেও। আর তা থেকে দেশের জন্য অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম শীতকালীন সবজি যাচ্ছে বিদেশেও, কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার আবহাওয়া ও মাটি সবজি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার সবজি আগাম হয় এবং দেশের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বিদেশেও রফতানি হয়। ফলে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি করে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার  সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মুকুল বলেন, ‘দীর্ঘ নয় বছর ধরে লাউ চাষ করে আসছি। এতে অনেক লাভবান হয়েছি। আমার ক্ষেতে কাজ করে ১৫টি পরিবার তাদের সংসার চালাচ্ছে। আমাকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকও লাউ চাষে এগিয়ে আসছেন’।

তিনি আরো জানান, তার লাউক্ষেতের ১৫ শ্রমিকের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। দিনে একজন পুরুষ শ্রমিককে ৩০০ টাকা ও নারী শ্রমিককে ২৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।

শ্রমিক ইদু মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ইউপি চেয়ারম্যানের এই লাউক্ষেতে কাজ করে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাই। বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক দিনাজপুর হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আর ছোট ছেলে সাদ্দাম হোসেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে বিবিএসে পড়ে’।ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম শীতকালীন সবজি এখন যাচ্ছে বিদেশেও, সবজিচাষি মেহেদী হাসান জানান, এক একর সবজি উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে প্রায় একলাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে একরপ্রতি লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

সবজি ব্যবসায়ী মানিক বলেন, ‘এখানে উৎপাদিত সবজি আমরা বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশে রফতানি করি।  জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক’।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, জেলায় এবারের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চাষ হয়েছে।ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম শীতকালীন সবজি যাচ্ছে বিদেশেও, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ১ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিকটন সবজি উৎপাদিত হবে।

কৃষি বিভাগের নজরদারি থাকলে কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন ও বেকারদের কর্মসংস্থানে শীতকালীন আগাম সবজি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞরা।