বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১৭ - ১৭:০০

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্ম বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তারা কিছুক্ষণ সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সমাধিসৌধের সামনে রক্ষিত মন্তব্য বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে পৌঁছান। এর কিছুক্ষণ পর পৌঁছান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়। পরে তিনি ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। সকাল ১১টায় তিনি হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেন।

সকাল ১০টা ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সভানেত্রী হিসেবে মন্ত্রি পরিষদের সদস্য ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর করিম সেলিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্কাস আলী, জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আযম, সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফসহ কেন্দ্রীয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের নামে একটি স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ এবং আমাদের ছোট রাসেল সোনা নামে শিশুদের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

শেখ হাসিনা শিশু সমাবেশে, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং দুস্থদের মাঝে সেলাইয়ের মেসিন বিতরণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী একটি বইমেলার উদ্বোধন করবেন এবং আমার ভাবনায় ৭ই মার্চ শীর্ষক শিশুদের চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। বিকেলে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। জাতির জনকের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও। দিনটি উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ,  আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরকারি ভাবেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। জেলা সদরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ডিএফপি ও গণযোগাযোগ অধিদফতরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেয়।

গোপালগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হয়নি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়ায় আসেন। প্রতি বছর গোপালগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হলেও এবার ঘটেছে তার ব্যাতিক্রম। এবার অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গোপালগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হয়নি। যার কারনে স্থানীয় সাংবাদিকরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেনি। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। অনেকেই বলছেন এ ঘটনাটি গোপালগঞ্জে নতুন একটি ঘটনা। যা ইতিপুর্বে কখনোই গোপালগঞ্জে ঘটেনি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার অফিসে স্থানীয় সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তাদেরকে জানানো হয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা জনিত কারনে গোপালগঞ্জের কোন সাংবাদিককে নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হয়নি। ছবি ও সংবাদ কি করে আমরা পাব এমন প্রশ্নের জবাব আসে সেটা আপনাদের ব্যাপার।