মহা উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মোংলা বন্দর

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-০৪ - ১৬:৪৩

আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : মোংলা বন্দর খুলনাঞ্চলের একটি অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ বিগত সরকারের আমলে এই বন্দরের প্রতি চরম অবহেলার কারণে এটি লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বন্দরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। যার ফলে বন্দরের সুযোগ-সুবিধা একের পর এক বৃদ্ধি পেতে থাকে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পশুর চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরটি ক্রমান্বয়ে কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া নেভিগেশন ব্যবস্থার উন্নতিতে এখন রাতেও এ বন্দর দিয়ে জাহাজ আসা-যাওয়া করতে পারছে। ক্রমান্বয়ে এ বন্দরের কর্মব্যস্ততা ও গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ,কে,এম ফারুক হাসান জানান, এই মোংলা বন্দরে বিগত সরকারের আমলে বছরে যেখানে আসতো মাত্র ৪০ থেকে ৫০টি জাহাজ এখন বর্তমানে এক মাসেই আসছে ৭০ থেকে ৮০টি জাহাজ। গত বছরের নভম্বর মাসে এ বন্দরে ৮৭টি জাহাজের আগমন ছিল, যা এই বন্দরের ৬৭ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ বন্দরকে আরো কার্যকরী করার জন্য পদ্মা ব্রিজ, খান জাহান আলী বিমান বন্দর ও খুলনা-মোংলা রেল লাইনের কাজ চলছে। এছাড়া বন্দর সংলগ্ন রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও চলছে জোরেশোরে। সরকার এ বন্দর ব্যবহার করে আঞ্চলিক ট্রানজিটের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। যার ফলে ভবিষ্যৎতে এ বন্দরের ব্যবহার বহুগুনে বেড়ে যাবে। মোংলাকে ঘিরে ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে। এতে এখানকার লোকজনের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। মোংলা এলাকাকে বন্দর কেন্দ্রিক আধুনিক শহরে উন্নিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির জন্য যা যা করার দরকার সরকার তার সবই করছে সরকার। বিশেষ করে বন্দরের ইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নতুন নতুন সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকার পশুর চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি আউটার বার এলাকার ড্রেজিংয়ে জন্য ৭১২ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা সংরক্ষণ করা হবে। বন্দরের নাব্যতা ও সুবিধাদি বৃদ্ধি করে চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বন্দর হিসেবে এটাকে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই মোংলা বন্দর দেশের উন্নয়নে তথা বিশেষ করে খুলনা এলাকার ভাগ্য উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সকলকে মিলে-মিশেই এ বন্দরকে সচল রাখতে হবে। সকলে মিলে এ বন্দর ব্যবহার করলে দেশের উন্নয়ন মোংলা বন্দর বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য জি টু জি পদ্ধতিতে চায়না সরকারের অর্থায়নে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভারতীয় এলওসি’র আওতায় ৮১৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমমানের প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। পিপিপি প্রক্রিয়াধীন দুইটি জেটি নির্মাণের চুক্তি ইতিমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাছাড়া সরকারী অর্থায়নে আরো দুইটি জেটি নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। ইয়ার্ড বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। মোংলা বন্দরের জায়গা সীমিত তাই স্বল্প জায়গায় সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণ করে অফিস ও আবাসিকের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাকী খালি জায়গা ইয়ার্ড ফ্যাসিলিটিস বৃদ্ধি করা হবে। মোংলা বন্দরের সুদীর্ঘ ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় জলযান ক্রয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত সুবিধাসহ অপারেশন কার্যক্রম তরান্বিত করার জন্য দুইটি হেলকপ্টার ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি মোংলা বন্দরকে আধুনিক বন্দরে রুপান্তর করার জন্য একটি মাস্টার প্লান টেন্ডার করা হয়েছে। বন্দরে ৩০/৪০ তলা বিশিষ্ট একটি সুউচ্চ (ম,ব,ক রাসেল টাওয়ার) টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৫/৬টি জেটি রয়েছে, এটি বাড়িয়ে আরো ৮টি জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। জয়মনিরঘোল ও আকরাম পয়েন্টে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। ইতিমধ্যে বন্দরের জন্য একটি অয়েল স্পিলিং ভ্যাসেল ক্রয় করা হয়েছে। আরো অত্যাধুনিক জাহাজ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী ৩০ বছরের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার মহা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে মোংলা বন্দরকে ঘিরে।
বন্দর চেয়ারম্যান ফারুক হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বন্দরের প্রতি খুব তীক্ষè ও আন্তরিক নজর রয়েছে। তিনি বন্দরকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। যার অধিকাংশই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। তাছাড়া বন্দরকে ঘিরে তার রয়েছে নানা ধরণের দিক নির্দেশনা, পরিকল্পনা ও স্বপ্ন। তার নিদের্শনার মধ্যে অন্যতম হিসেবে রয়েছে এ বন্দরকে কখনওই বন্ধ করা যাবে না, নিয়মিত ড্রেজিং করে বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে। এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুলনা-মোংলা রেল লাইন, পদ্মা সেতু, বিমান বন্দর, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান আরো বলেন, মোংলা-রামপালের সংসদ সদস্য (বাগেরহাট-০৩) আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এ বন্দরের প্রতি সবর্দাই সজাগ দৃষ্টি রাখেন। বন্দর পরিচলনায় নির্দেশনা ও সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি যে কোন ধরণের সমস্যায় তিনি সব সময় সক্রিয়ভাবে সমাধানে এগিয়ে আসেন।
পরিশেষে তিনি আরো বলেছেন, লোকবল সংকট থাকা সত্বেও মোংলা বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস ও আন্তরিকভাবে ২৪ ঘন্টাই কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন, বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দর ব্যবহারকারী, গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একে অপরের সাথে মিলে মিশে কাজ করার মধ্যদিয়ে এ বন্দর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।