রূপসায় পুলিশ সদস্যকে মারধর ঘটনায় মামলা ডিবিতে হস্তান্তর : বিউটির রিমা- মঞ্জুর

প্রকাশঃ ২০২০-১১-০৫ - ২০:২৭

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার রূপসায় পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে রূপসা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বিউটিকে গ্রেপ্তার হলেও অন্য আসামিরা এখন আটক করতে পারেনি। গ্রেফতারকৃত বিউটির ভাতিজা আহমদ আলী শেখ ও মোহাম্মদ আলী শেখসহ অন্যান্য আসামিরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে। এদিকে ঘটনার ৫দিন রূপসায় পুলিশ সদস্যকে মারধর ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা জেলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার রূপসা থানা পুলিশ জেলা ডিবি’র কাছে মামলাটি হস্তান্তর করেন বলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রূপসা থানার এসআই বাবলা দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই রাজিউল আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার আদালতের মাধ্যমে রূপসায় পুলিশ সদস্য মারধরের ঘটনায় আটককৃত আসামি ফাতেমা আক্তার বিউটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিলো। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারক একদিনের রিমা- মঞ্জুর করেছেন। আজ বিউটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এছাড়া এজাহারভূক্ত আসামি বিউটির ভাতিজা আহমদ আলী শেখ ও মোহাম্মদ আলী শেখ এবং গাড়ি চালক মনি গাজীসহ অন্যা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহতি রয়েছে।
অপরদিকে গ্রেফতারকৃত বিউটি স্বামী রূপসা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও রূপসা টেম্পু অটোটেম্পু মাহেন্দ্র শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, তার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক নৈহাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং মফিজুলের সালা রূপসা চিংড়ি বনিক সমিতির সভাপতি ও মাইক্রোবাস মালিত সমিরি বিরুদ্ধে চাদা বাজিসহ নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে এলাকায় লিফলেট বিতরন করা হয়। লিফলেটের উল্লেখ করা হয়, মফিজুল চরমপন্থী দলেল এক সময়ে চাদা বাজ সদস্য ছিলেন। চিঠি দিয়ে চাদা আদায় করা ছিলো তার কাজ। তৎকালীণ পুলিশের ভয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে সে জীবন যাপন করতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগে এক নেতার মাধ্যমে পুলিশের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে হয়ে যায় রূপসা উপজেলার শ্রমীকলীগের সভাপতি। শুরু হয় নতুন আঙ্গিকে চাদাবাজির ঘটনা। ওরা তিনজনে মিলে তিন সেক্টর থেকে হাতিয়ে নেয় শতকোটি টাকা। ওই সব সম্পত্তি ও টাকা পয়সা নিজের নামে না করে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নামে রাখা হয়েছে।
রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গাড়ি প্রতি ৪০ টাকা চাদা আদায়ের পরিবর্তে ৩০০-৪০০ টাকা করে চাদায় আদায় শুরু করেন। এছাড়া প্রতি মাসে বাস মালিকদের কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা আদায় করতেন। চাদা বাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক বাস মালিকরা বাস বিক্রি করে দিতে বাধ্যহন।
মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তক নৈহাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর ) রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, লিফলেট বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ক্রসফায়ারে নিহত মিনা কামালের বাহিনীরা। তাদের ধারনা মিনা কামাল ক্রয় ফায়ার বিষয়টি আমার হাত ছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে হেয়পন্ন করার জন্য এ সব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ( ৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে ফাতেমা আক্তার বিউটি চারটি হাইয়েস, দুটি প্রাইভেটকার ও ৩/৪টি মোটরসাইকেল যোগে প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি বহর নিয়ে খুলনা শহরে তার মেয়ের বউভাতের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। টোল প্লাজার ৬ নম্বর লেন দিয়ে তারা সিরিয়াল ভঙ্গ ও টোলে কোনো টাকা না দিয়ে পার হতে চাচ্ছিলেন। এ সময় টোল আদায়কারীরা তাদের বাধা দিলে বিউটি, তার দুই ভাতিজা আহমদ আলী শেখ ও মোহাম্মদ আলী শেখ এবং মনি গাজী নামে এক যুবক গাড়ি থেকে নেমে সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। একপর্যায়ে বিউটি সিকিউরিটি গার্ড রবিউলের গায়ে ধাক্কা দেন। এ সময় অপর সিকিউরিটি গার্ড কামাল পুলিশদের ডাকেন। পুলিশ তখন ঘটনা শুনতে গেলে পুলিশ সদস্য সাইদুর রহমানকে আঘাত করেন বিউটি। টোলপ্লাজা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাকির বলেন, টোলপ্লাজায় তিনজন পুলিশ দায়িত্বে ছিলেন। গাড়ি বহর নিয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে যাওয়ার জন্য সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে এক নারীর বাকবিত-া হচ্ছে দেখে পুলিশ এগিয়ে যায়। এ সময় বিউটি পুলিশ কনস্টেবল সাইদুর রহমানকে আঘাত করেন। এতে তার পোশাকের বোতাম ছিঁড়ে যায়। পরে টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে বিউটিকে আটক করেন।