আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে খুব বেশি একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি মোংলাসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকায়। আর এর বড় কারণ হলো সুন্দরবন। প্রতিবারের মত এবার ঢাল হিসেবে বুক পেতে দেয়ায় উপকূলের বাসিন্দা রক্ষা পেলেও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে সুন্দরবনের গাছপালা ও বনবিভাগের স্থাপনাগুলোতে। তারপরও সুন্দরবনের বুক চিরে আসা আম্পানের তান্ডবে মোংলায় কাঁচা ঘরবাড়ী, বেড়ী বাঁধ ও মাছের ঘেরে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে মোংলায় ৩শ ঘরবাড়ী পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৯শ ঘরবাড়ীর। চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে দেড় হাজার। যে ক্ষতি হয়তো আরো বেশি হতে পারতো, তা কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন।
আম্পানে পশ্চিম সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে ১২ হাজার ৩৩২টি। টাকার দিক দিয়ে শুধু গাছের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ টাকার। অন্য দিকে পূর্ব সুন্দরবনে বনবিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা ও গাছের ক্ষতি হয়েছে ০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার। পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের ৪টি রেঞ্জের ১০টি জলযানসহ অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে গঠিত পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটির দেয়া তথ্যমতে এ হিসাব পাওয়া গেছে। এ তথ্য অনুযায়ী আম্পানের ঝড়-জলোচ্ছাসে বনের কোন বন্যপ্রাণীর প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো: বেলায়েত হোসনে ও পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশির আল মামুন বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনে আম্পানের আঘাতে ১২ হাজার ৩৩২টি গেওয়া, গরান গাছ ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছে। এর মধ্যে গরান গাছের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৭৯টি। আর পূর্ব সুন্দরবনে গাছ ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছে ২৬টি। এই ২৬টি গাছ হলো বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ঘর সংলগ্ন জায়গায় লাগানো নারকেল, তাল, ঝাউ, বট ও রেইনটি গাছ। এছাড়া সুন্দরবনে বনবিভাগের ২৬টি জেটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৪৯টি ফরেস্ট অফিস ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ঘরের চাল উড়ে এবং গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পূর্ব সুন্রবনের কটকা, কচিখালী ও হাড়বাড়িয়ায় দুটি জেটি ও একটি ওয়াচ টাওয়ার ভেঙে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর হরিণ ও ডলফিনের শেড ভেঙে গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনে ১৭টি ও পশ্চিম সুন্দরবনে ২৩টি মোট ৪০টি মিষ্টি পানির পুকুর ঝড়ের জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে সুন্দরবনের বাঘ-হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর খাবার সুপেয় পানির নষ্ট হয়ে গেছে। পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের এ ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রধান দপ্তর ও মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছে বনবিভাগ। সেখান থেকে সরকারী বরাদ্দ পেলেই দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনাগুলো সংস্কার করার কথা জানিয়েছেন বনভিাগের এ দুই কর্মকর্তা।