গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র পিয়াস রায় নিহত হয়েছেন। তিনি ওই মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তার মৃত্যুতে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সহপাঠীরা এ অকাল প্রয়াণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। পিয়াসের মৃত্যুতে কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম হয়নি। সকালে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সহপাঠীরা নিরবতা পালন করেন। পরে তারা শোকের চিহ্ন কালো ব্যাজ ধারণ করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিয়াস স্মরণে ক্যাপম্পাসে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
সহপাঠীরা জানিয়েছে, পিয়াস সদা হাস্যজ্জ্বল, বন্ধু বৎল ও প্রিয় ভাষী ছিলো। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সে সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো। এছাড়া সে প্রবল ভ্রমন পিপাসু ছিলো বলেও সহপাঠীরা জানিয়েছে।
কলেজের ইন্টার্ন ডা. পুস্পিতা রায় বলেন, গত ৫ মার্চ পিয়াসের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নেপালে তার বন্ধু রয়েছে শুনেছি। সেখানে সে বেড়াতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়। তার মৃত্যুতে কলেজে স্তব্দতা নেমে এসেছে।
পিয়াস রায় বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সুখেন্দু বিকাশ রায়ের ছেলে। তারা বরিশাল নগরের নতুন বাজারস্থ মথুরানাথ পাবলিক স্কুল সংলগ্ন বহুতল একটি ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্লাটে বসবাস করেন। বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মা পূর্ণা রানি মিস্ত্রি বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ দম্পত্তির এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পিয়াস রায় বড়। তার বোনের নাম শুভ্রা রায়।
পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়।
পিয়াসের মা পূর্ণা রানি মিস্ত্রি বলেন, রোববার রাতে বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পিয়াস। সোমবার সকালে ঢাকা পৌঁছে কাকার ছেলে বাসায় গিয়ে ওঠে। নেপাল যাওয়ার জন্য কাকাতো ভাইয়ের বাড়ি থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে যায় পিয়াস। তিনি আরো বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সর্বশেষ ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়। তখন পিয়াস জানিয়েছিলেন তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেনে উঠবেন। এরপর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কাঠমান্ডুতে এ দুর্ঘটনার পর থেকে আর পিয়াসের কোনো খোঁজ পাননি। শুনেছেন তিনি মারা গেছেন।
পিয়াস ইউএস বাংলার উড়ো জাহাজের যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়ে পিয়াসের ছোট বোন শুভ্রা রায়। তিনি বলেন, পিয়াস দেশ বিদেশ ভ্রমন করতে ভালোবাসতো। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নেপালে তার বন্ধু ছিলো। তাদের সাথে সময় কাটাতে সে ৫ দিনের জন্য নেপাল যাচ্ছিলো।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত হোসেন তপন কলেজ ছাত্র পিয়াসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।