গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাঠে শ্রমিক না থাকলেও অসাধু ইউপি সদস্যরা খাতা কলমে শ্রমিক দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার পায়তারা করছে।
জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রেদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে (৪০ দিনের কর্মসূচি) ১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১১টি ইউনিয়নে ৩৬টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টাকা বন্টন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ হরিনাহাটি সরওয়ার শিকদারের বাড়ির রাস্তা থেকে আব্দুল রহিম শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূর্ণনির্মাণ, শ্রীদাম কর্মকারের বাড়ি হইতে তৈয়াব আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ ও বাসুদেব মধুর বাড়ি হইতে বিমল রায়ের বাড়ি পর্যন্ত পূর্ণনির্মাণের ৩টি প্রকল্প উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের দাখিল করে।
প্রকল্প ৩টির অনুকুলে ৮ লক্ষ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ৩টি প্রকল্পে দৈনিক ১০০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা। গতকাল সোমবার ৩টি প্রকল্পে ৩২জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীদাম কর্মকারের বাড়ি হইতে তৈয়াব আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ-এর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মুকুল হাওলাদারের সাথে আজ বুধবার দুপুরে কথা হলে তিনি জানান, যে সময় শ্রমিকরা বেকার থাকে সরকার সে সময়ে এই প্রকল্পের কাজ না দিয়ে যে সময়টা ধানকাটার সময় তখন এ প্রকল্প দিয়ে আমাদের বরং বেকাদায় ফেলে দেয়া হয়। তিনি বলেন, তার প্রকল্প এলাকায় ৩২ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও আজ বুধবার তিনি মাত্র ১৬জন শ্রমিক পেয়েছেন। ধান কাটলে একজন শ্রমিক ৭শ’ টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন, আর এখানে পান মাত্র ২শ’ টাকা। তাই ধান কাঁটা বাদ দিয়ে কেউ ৪০ দিনের এই কাজ করতে আসবে না। তিনি ধান কাঁটা মৌসুমের আগে অথবা পার এই প্রকল্প দেয়ার দাবী জানান সরকারের কাছে।
হরিনাহাটি সরওয়ার শিকদারের বাড়ির রাস্তা থেকে আব্দুল রহিম শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূর্ণনির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম জানান, এখন ধান কাটার মৌসুম তাই শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আমার প্রকল্প এলাকায় ৩৩ জন শ্রমিক থাকার কথা তাকলেও আজ বুধবার তার সাইটে ২২ জন শ্রমিক ছিল বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে প্রকল্প ৩টির কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, মাঠে যারা কাজ করতে না আসে তাদেরও প্রতিদিন হাজিরা দেখানো হয়। তাদের স্বাক্ষর জাল করে ইউপি সদস্যরা টাকা উত্তোলনের পায়তারা করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজী আব্দুল আজিজ বলেন, এখন ধান কাটার মৌসুম শ্রমিক সংকটের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, যে সকল শ্রমিক সরেজমিনে কাজ করেছে তাদের বাইরে একটি টাকাও বিল দেয়া হবে না।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, এ সময়টা সাধারনতঃ শ্রমিক সংকট থাকে। তার মধ্যেও যদি কোন ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ আসে, তা’হলে আমরা সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের বিষয়টি যেহেতু কানে এসেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।