গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌরসভায় ওয়ার্ড বিভক্তিতে অন্তহীন ত্রুটি দেখা দিয়েছে। নতুন ওয়ার্ড বিভক্তিতে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ঘাঘর নদীর পশ্চিম পাড়ের ১ বর্গ কি:মি: এলাকা বাদ পড়েছে। এতে এলাকাবাসী ওই এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। কোটালীপাড়া পৌরসভার সীমানা থেকে বাদ পড়ে ৯নং ওয়ার্ডের ঘাঘর নদীর পশ্চিমপাড় বাসীরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া নতুন ওয়ার্ড বিভক্তিতে এক ওয়ার্ডের ভোটার অন্য ওয়ার্ডে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। নতুন ওয়ার্ড বিভক্তির বিধি অনুযায়ী এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডের ভোটারের ব্যবধান থাকবে মাত্র ১০শতাংশ। এখানে ওয়ার্ড বিভক্তিতে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ভোটারের ব্যবধান ১শ থেকে ১শ ২০শতাংশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর প্রকাশিত নতুন ওয়ার্ড বিভক্তির গেজেট সুত্রে জানা গেছে, ৯ নং ওয়ার্ডের সীমানা পশ্চিমে ঘাঘর নদী নির্ধারন করা হয়েছে। এ পৌরসভা গঠনের পর ১৯৯৮ সালের ২৫ মে প্রকাশিত গেজেটে পৌর সভার ৯ নং ওয়ার্ডের ঘাঘর নদীর পশ্চিমপাড়, ঘাঘর খাল, গাজীবাড়ি, সুশীল পাটনীর বাড়ি, খাদ্য গুদাম, ঘাঘর মৌজার উত্তর পূর্ব সীমানা অর্ন্তভূক্ত করা হয়। নতুন গেজেটে ওই এলাকা বাদ পড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম হতাশা শুরু হয়েছে।
কোটালীপাড়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা গাজী আব্দুল জলিল ও গাজী মহর আলী বলেন, বিগত ৩ টি নির্বাচনে আমরা এ ওয়ার্ড থেকে পৌর নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এখানে পৌরসভা উন্নয়ন কাজ করছে। আমরাও হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছি। এখানে নাগরিক সুযোগ সুবিধা গড়ে উঠেছে। হঠাৎ কওে আমাদের পৌরসভা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আমরা পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক নই । মনে হচ্ছে ছিট মহলের বাসিন্দা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। আমরা দ্রুত এর সমস্যার সমাধান চাই।
৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওলিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, এ পৌরসভার নির্বাচন সমাগত। এ অবস্থায় গেজেট প্রকাশের সময় ভুলবসত একটি বড় এলাকা বাদ পড়েছে। এখন ওই এলাকার মানুষ নিজেদের পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না। বাদপড়া এলাকা পৌরসভার মধ্যে অর্ন্তভূক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করেছি। গেজেট সংশোধনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছি।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র দে বলেন, নতুন ওয়ার্ড বিভক্তির বিধি অনুযায়ী এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডের ভোটারের ব্যবধান থাকবে মাত্র ১০শতাংশ। কিন্তু কোটালীপাড়া পৌরসভায় বিলুপ্ত ঘাঘর ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডকে ভেঙ্গে মাত্র ২টি ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। এতে কোটালীপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌরসভার অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় এ দু ওয়ার্ডে ১ শ থেকে ১ শ ২০ ভাগ ভোটার বেড়ে গেছে। এটি ওয়ার্ড বিভক্তির বিধি পরিপিন্থী বলে ওই জন প্রতিনিধি মন্তব্য করেন।
২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম হুমায়ূন কবির বলেন, ওয়ার্ড বিভক্তির ২০০৯ এর ১৫ ধারা মোতাবেক কাউন্সিলর বা নির্বাচনী এলাকা বিলুপ্ত করা যাবে না। কিন্তু আমার ভোট ২নং ওয়ার্ড থেকে ১নং ওয়ার্ডে নিয়ে এ ধারার লংঘন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২নং ওয়ার্ড থেকে ৩নং ওয়ার্ডে ২৪ জন ভোটারকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের ১২ জনের ভোট ১নং ওয়ার্ডে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলা পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশ ভোট ৩নং ওয়ার্ডে কেটে নেয়া হয়েছে।
৩নং ওয়ার্ডে আমার বাড়িঘর নেই। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে আমি একবার পৌরসভায় মেয়র নির্বাচন করেছি। পৌরসভার বিগত ৩টি নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে ভোট দিয়েছি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়ে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। একটি কুচক্রী মহল পৌর নির্বাচনকে সমানে রেখে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে এ কাজ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার হাসান উদ্দিন পৌর এলাকার ওয়ার্ড বিভক্তিতে ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলেন, আমার কাছে এ ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে কিছু অভিযোগের সমাধান আমি করেছি। জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচন কমিশনে কাগজ পাঠিয়েছি।