কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে সরকারি চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে ১ লাখ ৮০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারের সেই কথিত বন্ধু মো: আনোয়ার হোসেন লিটনের বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরি না হয়ে চুক্তিভিত্তিক চাকুরি হওয়াতে ভুক্তভোগী মো: তারেক আজীজ এর চাচা মো: ফরিদ আহমেদ খুলনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে ওই ভুক্তভোগী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অবগত করলে পরিচালক তাকে লিটনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিতে বলেন। বর্তমানে ওই অভিযোগের তদন্ত দায়িত্বে রয়েছেন নিরালা পুলিশ ফাড়ির এএসআই রফিক।
এ ব্যাপারে ওই তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই রফিক গতকাল রোববার বিকেলে এ প্রতিবেককে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ফরিদ আহম্মেদ এর কাছ থেকে আনোয়ার হোসেন লিটন টাকার লেনদেন হয়েছে। ভুক্তভোগীর চাচা ফরিদ আহমেদ এর সাথে কথা হলে তাকে বলেন, তার কাছ থেকে লিটন ৮০ হাজার টাকা নেয়। এই টাকাগুলো বিকাশ মাধ্যমে আর কিছু টাকা নগদ দেয়। বাকি এক লাখ টাকা লিটনকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়। তদন্তকারি কর্মকর্তা এএসআই রফিক জানান, এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন লিটন তাকে (তদন্ত কর্মকর্তা) বলেন, খুমেক হাসপাতালে কিছু মালামাল ক্রয়ের জন্য ফরিদের কাছ থেকে ব্যবসায়ী কাজের জন্য ধাপে ধাপে কিছু টাকা নিয়েছেন হাসপাতালে চাকরি দেয়ার জন্য নেওয়া হয়নি। ওই সব মালামাল ফরিদ আমার কাছ থেকে নিতেন।
এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ফরিদ আহমেদ গতকাল রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ভাইপো মো: তারেক আজীজকে খুমেক হাসপাতালে সরকারি চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে আনোয়ার হোসেন লিটন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। এই সব টাকা লিটনকে ২৫ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে, হাতে হাতে নগদ ৫৫ হাজার টাকা এবং বাকি এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। (যার চেক নম্বর এসবি/এএ-৬৮০৩৬৩৩)। ওই প্রতারক লিটক প্রথমে আমাকে বলে হাসপাতালের পরিচালক আমার ঘনষ্ঠি বন্ধু। আপনার ভাইপোর সরকারি চাকরি পেতে হলে ওই পরিচালককে ১ লাখ ৮০ টাকা দিতে হবে।
চলতি বছরের গত ১৫ জুন তার ভাইপো মো: তারেক আজীজ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হিসেবে করোনা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। পরে আমি খোজ খবর নিয়ে জানতে পারি ওই চাকরি ৬ মাসের জন্য। খুমেক হাসপাতালের সরকারি চাকরি না, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। আমার ভাইপো যখন হাসপাতালের পরিচালক বেতন আটকায় দেন, তখন আমি পরিচালককে কাছে এসে বলি’ আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনোয়ার হোসেন লিটন হাসপাতালে চাকরি চাকরি পেতে হলে আপনাকে টাকা দেওয়া লাগবে এই কথা বলে আমার কাছ থেকে সে ১ লাখ ৮০ টাকা নেয়। তখন পরিচালক আমাকে বলে আপনি তার কাছ থেকে টাকাগুলো আদায় করে নেন।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারকে বিকেল ৬ টা ৬ মিনিটে তার ব্যবহৃত সেল ফোনে কল দিয়ে নিলক নামক এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, স্যার বিশ্রামে আছে পরে ফোন দেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে পুনরায় ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জানা গেছে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারকে সংবাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য অধিকাংশই সাংবাদিকরা ফোন দিলে সাধারণত ফোন তিনি ধরেন না, অন্য কাউকে দিয়ে রিসিভ করান তিনি।
জানা গেছে, খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার নিজ ক্ষমতা বলে ৩/৮ এর ২০১৯ ধারা অনুযায়ী সেবা ক্রয় করেছেন। করোনা হাসপাতালের জন্য ৬ মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক (আউটসোর্সিং) হিসেবে ২৯ জন লোক নিয়োগ দেন। এই ২৯ জনের মধ্যে অধিকাংশই হাসপাতালের পরিচালকের, ৫-৭ জন হাসপাতালের ডাক্তারদের দেওয়া আর বাকির লোক নেওয়া হয় পরিচালকের বন্ধু আনোয়ার হোসেন লিটনের মাধ্যমে। হাসপাতালের সূত্র মতে, ওই ২৯ জনের করোনা হাসপাতালের জন্য নেয়া হলেও সবাই কিন্তু করোনা (ডায়াবেটিস) হাসপাতালে ডিউটি করে না। এখান থেকে কিছু লোককে আবার অন্য জায়গায় ডিউটি করানো হয় এটাও পরিচালকের নিজ ক্ষমতা বলে করেন।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর থেকেই আনোয়ার হোসেন লিটন নামের নগরীর নিরালার এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তিনি পরিচালকের বন্ধু পরিচয় দিলেও দু’জনের বয়সের তারতম্য অনেক। এছাড়া তিনি দেশের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার ছোটভাইর বন্ধু হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেন। খুলনা থানা থেকে সম্প্রতি বদলী হওয়া অফিসার ইনচার্জও ওই ব্যক্তিকে নিয়ে একদিন খুমেক হাসপাতালে যান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি একজন ঠিকাদার হিসেবে চেনেন। খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি প্রায়ই হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে খবরদারি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে সম্প্রতি হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাজেহাল হয়েছেন। ওই ব্যক্তির ছেলেসহ এ পর্যন্ত আটজন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরীচ্যুৎ করে তদস্থলে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন পরিচালকের ওই কথিত বন্ধুর ছেলেও। তবে বর্তমানে হাসপাতালের পরিচালকের বন্ধু ও তার ছেলে এখন আসেন না। এর আগে এই প্রতিবেদকের কাছে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার আনোয়ার হোসেন লিটন তার বন্ধু হয় বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন সে হাসপাতালে আসে, তবে সব সময় বসে থাকে না।