খুমেক হাসপাতাল বহি: বিভাগ : ‘ডাক্তার হাসপাতালে না আসলেও বলা হচ্ছে মিটিংয়ে ব্যস্ত’

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-০১ - ১৭:৪৮

ডাক্তার সেবা না পাওয়ায় রোগীর সংখ্যা কমছে : বাড়ছে ভোগান্তী

কামরুল হোসেন মনি : গৃহবধূ আকলিমা। সাতক্ষীরার বাসিন্দা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গাইনী ডাক্তারকে দেখাতে স্বামীকে নিয়ে কাকডাকা ভোরে মটরসাইকেল ভাড়ায় করে খুমেক হাসপাতালে সকাল ৭টায় পৌছান। বহি: বিভাগ থেকে টিকিট কেটে গাইনী ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করেন। তার মতে অনেকেই আসছেন গাইনী ডাক্তার দেখাতেন। হাতে গোনা রোগীর সংখ্যা ৮-১০ জন। ঘন্টাখানিক বসার পরও ডাক্তারে দেখা পাননি। বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম (৭৬) নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন সার্জারী ডাক্তার দেখাতে। বয়সের কারণে ঠিকমতো বসতেও পারছেন না। মায়ের কষ্টো দেখে ছেলে বাবর আলী অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। ঘন্টা দেড় পার হয়ে গেলেও ডাক্তাররা চেম্বারের নেই। রিসিপশনে দায়িত্ব থাকা টিকিট জমা নেওয়া ব্যক্তিরা রোগীদের বলেন, ডাক্তার স্যার আসছে মিটিংয়ে আছে, বসেন। কখন আসবেন জানা নেই, মিটিং শেষ হলেই চলে আসবে। কিন্তু বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারই হাসপাতালে প্রবেশই করেননি। গত ৩০ মে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহি: বিভাগের চিত্র এটি। ্ওই দিন সকাল ৮টা থেকে এ প্রতিবেদক সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে এই সব তথ্য পাওয়া যায়।
ওই দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাদে আর কোন ডাক্তার তাদের সংশ্লিষ্ট চেম্বারে দেখা মেলেনি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির পর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে সময় মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না বহি: বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ভূক্তভোগীদের রোগীদের অভিযোগ করোনায় প্রকাপের কারণে এই হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রোগী দেখার সময় বেধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য অনেকেই খুলনা জেলার বাইরে থেকে অসুস্থ রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। সময় মতো ডাক্তাররা চেম্বারে আসেন না। আবার রোগীর দেখার সময় কমিয়ে দিছেন। অনেকে এই পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালে আসাই বাদ দেওয়া ছেড়ে দিছেন। অনেকেই ঠেকায় পড়ে মা-বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন। বেসরকারি হাসপাতালে সেবা না পাওয়ায় উপজেলা থেকে অনেকই আসেন এই সরকারি হাসপাতালে। সেখানেও সময় মতো পাচ্ছেন না ডাক্তারদের। আবার ১২টা মধ্যে রোগীর সেবাও বন্ধ।
এর আগে দেশে করোনাভাইরাস না থাকাকালীন সময়ে চলতি বছরে ২০ জানুয়ারি ওই হাসপাতালের বহি:বিভাগে নানা অনিয়মের অভিযোগ অভিযান চালিয়েছিলেন দুর্ণীনি দমন কমিশনার (দুদক)। অভিযানের সময় বহি: বিভাগে মেডিসিন বিভাগ (মহিলা) ২১২নং চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকা, এছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন কোম্পানীর ওষুধ প্রতিনিধিগণের আনাগোনা, চিকিৎসক টেস্ট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। অভিযানের সময় দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কক্ষ থেকে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গণস্টিক সেন্টারের প্যাড ও প্যাথলজি স্লিপ উদ্ধরা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও টাকার বিনিময়ে সাধারণ রোগীদের ওইসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পরিচালক ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, বহি: বিভাগে চিকিৎসকদের নিয়ে কোন মিটিং সকালে হয়নি। যে বলেছে এসব মিথ্যা বলেছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির পর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে সীমিত আকারে রোগীদের সেবা দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীরা অপেক্ষা থেকেও সময় মতো চিকিৎসা না পাওয়া বিষয় তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি খোজ খবর নিচ্ছি।
গত ৩০ মে এ প্রতিবেদক  সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে এ প্রতিবেদক খুমেক হাসপাতালে বহি: বিভাগে সার্জারি-২০৯ এর ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে আছেন সুমন আহমেদ রাসেল। তিনি বলেন, নগরীর ছোট বয়রা থেকে তিনি এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। টিকিক কেটে ২০৯ নং রুমে রিসিপশনে জমা দিয়ে বসে আছি। সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালে বসে আছি। কিন্তু ডাক্তার এখনো আসেনি। এখন ১০টার কাছা কাছি বাজতে গেছে। রিসিপশনে টিকিট জমা নেয়া মহিলাটি বলেন ডাক্তার মিটিংয়ে আছেন। একই অভিযোগ রোগীর ছেলে মো: বাবর আলীর। তিনি বলেন, বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগমকে (৭৬)কে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মা অনেক অসুস্থ বসতেও পারছেন না। দেড় ঘন্টা পার হয়ে গেলো ডাক্তারের কোন খবর নেই।
২০৯ নং ডাক্তারের রুমে রোগীদের টিকিট জমা নিচ্ছেন এক মহিলা। তাকে ডাক্তারের আসার বিষয় এ প্রতিবেদককে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার পরিচালকের রুমে মিটিংয়ে আছেন। কখন আসবেন তা বলতে পারি না। তার কথাটি যাচাইয়ের জন্য হাসপাতালের পরিচালকের রুমে গেলে সেখানে কোন মিটিং হচ্ছে না। বহি: বিভাগে ৩১৫নং রুমে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এস এম জাবেদ মাহমুদ তাকে সকাল ৮টার মধ্যে হাসপাতালে চেম্বারে উপস্থিত দেখা গেছে।
এদিকে ২০৯ নং রুমে চিকিৎসক না থাকলে একজন ওষুধ প্রতিনিধিকে ডাক্তারের চেম্বারের মধ্যে ঢুকতে দেখা যায়। কিছুক্ষুর পর ভেতর থেকে বেরিয়ে  দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে থাকেন। তার বহি: বিভাগের ২য় তলায় আরো ওষুধ প্রতিনিধিগণদের ডাক্তারের চেম্বারের সামনে জটলা বেধে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
খুমেক হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, আমি পরিচালকের রুমে মিটিংয়ে ছিলাম। সব ডাক্তার কি মিটিংয়ে ছিলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।