দালাল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের চিঠি
কামরুল হোসেন মনি : আসমা খাতুন (২২)। গত ১ জুন তার হাত ভেঙ্গে গেলে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আসেন বড় ভাই মো: হাসানের সাথে। ওই দিন বহি: বিভাগে ডাক্তারের পরামর্শে তার বোনকে হাতে এক্সরে করার পরামর্শ দেন। ওই দিন তিনি এক ডায়াগণস্টিক সেন্টারের দালালের খপ্পরে পড়েন। ওই দালাল নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ওই দালাল এক্সরের প্লেট দিলেও তাকে তার সাথে রিপোর্ট প্রদান না করায় তিনি হয়রানী শিকার হন। তার মতো অনেকেই চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন ডায়াগণস্টিক সেন্টারের দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ দালাল নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে চিঠিও প্রদান করেছেন।
এদিকে বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগণস্টিক সেন্টারের সাথে ওই হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও জড়িত রয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। সরাসরি ডায়াগণস্টিক সেন্টার দালালরাই ওই সব ডাক্তারের নির্দেশনায় হাসপাতাল থেকে রোগী তাদের মনোনীত ডায়াগণস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ প্রতিবেদক ওই হাসপাতালে গেলে এই সব দালালদের তৎপরতা চোখে পড়ে। ওই সব ঘটনার চিত্র ও ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষন রয়েছে।
হাসপাতালে আউটডোরে সামনে কথা হয় ডায়াগণস্টিক সেন্টারের দালাল রুপালী সাথে। তিনি অকোপটে স্বীকার করেন বহি: বিভাগে গাইনী ডাক্তার ফারহানা হক আমাদের মডার্ন ডায়াগণস্টিক সেন্টারে নিয়মিত বসেন। তিনি কল করে রোগী নিয়ে যেতে বলেন। এছাড়া ডা: ফাতেমা ম্যাডাম আমাদের মাধ্যমে বিভিন্ন টেস্ট করানোর জন্য কল করেন। যে সব রোগীর যে রকম সমস্যা সেই সব টেস্ট আমাদেরকে ওখানে পাঠিয়ে দেন।
ভূক্তভোগীর রোগীর ভাই মো: হাসান বলেন, এই হাসপাতালে এক্সরে না হওয়া তিনি বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। গত ১ জুন তিনি এক দালালের খপ্পরে পড়েন। বাইরে থেকে তার মাধ্যমে টেস্ট করালে কম খরচে করায় দেওয়া যাবে এমন প্রেলোভন দেখিয়ে তাকে নগরীর লাইফ ডায়াগণস্টিক সেন্টারের নিয়ে যান। কিন্তু তার বোনের এক্সরে করার পর এক্সরে প্লেল্ট দিলেও রিপোর্ট প্রদান করেননি ওই ডায়াগণস্টিক সেন্টারে। প্লেটের সাথে রিপোর্ট নিতে হয় তাও তিনি জানতেন না। পুনরায় ডাক্তারকে দেখাতে আসলে রিপোর্ট চাইলে তিনি এক্সরে প্লেট বের করে দিলে ডাক্তার রিপোর্ট চান। তখন তিনি বুঝতে পারেন তিনি হয়রানী শিকারে পড়েছেন।
জানা গেছে, খুলনার নামকরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে-পড়া ভিড় থাকলেও দেশের চিকিৎসাসেবা হয়ে পড়েছে চেম্বার নির্ভর। সরকারি হাসপাতালে যেসব ডাক্তার চাকরি করেন তাদের প্রায় ৯৮ ভাগই চেম্বার খুলে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। শুধু অর্থের লোভে কতিপয় ডাক্তার হাসপাতাল থেকে কৌশলে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে চেম্বারে রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মুরাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, দালাদের কারণে অতিষ্ট হয়ে আমি সম্প্রতি এক মাস আগে পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি প্রদান করি। করোনার কারণে হয়তো পুলিশ এ বিষয়ে এখনো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কোন ডাক্তার যদি সরাসরি দালালদের মাধ্যমে রোগীকে বাইরে ডায়াগণস্টিকে প্রেরণ করেন। তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।