গুজব-গণপিটুনি রোধে কেএমপির বিশেষ বার্তা : সপ্তাহব্যাপী পাবলিক গণসচেতনতা শুরু
কামরুল হোসেন মনি : দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে হত্যার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের ধরতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বিশেষ গোয়েন্দা দল মাঠে অনুসন্ধানে নেমেছেন। পাশাপাশি গুজব-গণপিটুনি রোধে কেএমপির পক্ষ থেকে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছেলে ধরা গুজব বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবগুলো নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ছেলেধরাসংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিলে বা শেয়ার করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়েস্টেশনসহ পাবলিক রিলেটেড এলাকায় ‘ছেলেধরা’ গুজব রোধে পাবলিক গণসচেতনতামূলক সভা শুরু হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি’র) গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিএম নূরুজ্জামান (বিপিএম) বৃহস্পতিবার বলেন, গুজব-গণপিটুনি রোধে কেএমপির পক্ষ থেকে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। তিনি বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সচেতনতা বাড়ানোও হচ্ছে। ছুটির পর অভিভাবকেরা যাতে শিক্ষার্থীকে নিয়ে যান সে বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, প্রতিটি স্কুলের ক্যাম্পাসের সামনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কেউ যদি ছেলেধরা বিষয়ে গুজব বা এ ধরনের কোনো ঘটনা জানতে পারেন তাহলে যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯’ এ ফোন করলে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম উপস্থিত হবে। তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক বা শিক্ষার্থী সকল থানার পুলিশের নম্বর জানেন না। সে জন্য ‘ট্রিপল নাইনে’ যে কেউ অভিযোগ দিলেই আমরা ম্যাসেজ পেয়ে যাবো। তিনি বলেন, দেশের বাইরে কিছু কুচক্রি ব্যক্তি গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। ছেলেধরা গুজবটি কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিজেদের ফায়দা লুটছেন। ফেসবুকে কেউ গুজব ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশ সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকদের নিয়ে বড় ধরনের সমাবেশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেএমপি’র বিশেষ গণসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি লিফলেটে উল্লেখ করা হয়, “গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো গুরুতর ফৌজধারী অপরাধ। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা দল অনুসন্ধানে তৎপরতা শুরু করেছে। কাউকে সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করুন।
কেএমপি গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নগরীর সেন্ট জোসেফস স্কুল, পল্লীমঙ্গল হাইস্কুল, মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন স্কুল, হাজী মালেক গার্লস স্কুল, পল্লীমঙ্গল গার্লস স্কুল, আড়ংঘাটা স্কুল, ইসলামিয়া কলেজিয়েট স্কুল, ইকবাল নগর গার্লস হাইস্কুল, সরকারি মডেল হাইস্কুল, ওজোপাডিকো হাইস্কুল, পাওনিয়ার স্কুল, বিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দৌলতপুর মহাসিন স্কুল, করোনেশন গার্লস হাইস্কুল, খুলনা পাবলিক কলেজ ও খুলনা জিলা স্কুলে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট গ্রুপ হয়ে ওই সব স্কুলে গুজব-গণপিটুনি রোধে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি’র) গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিএম নূরুজ্জামান (বিপিএম) বলেন, মাথাকাটার গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব লিংক এবং ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এ সব ফেসবুক ও ইউটিউব লিংকের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। গুজবের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে তাদের কেউই ছেলেধরা ছিল না। দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে এমন গুজব ছড়ানো একটি দ-নীয় অপরাধ।