গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে উৎসবের আমেজে চলছে বোরোধান রোপণ। বোরোধান রোপণে জেলার ৫ উপজেলার কৃষক ও কৃষাণী ব্যস্ত সময় পার করছেন। গোপালগঞ্জ জেলার মাঠে মাঠে এখন জমি প্রস্তুত, ধান রোপণ ও বীজতলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহের কাজ করছেন তারা। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষক জমিতেই থাকছেন। জেলার ফসলের মাঠগুলো এখন কৃষক, কৃষাণী ও শ্রমিকের পদচারণায় মুখরিত। মাঠে কাজের চাপ বেশি তাই জেলার হাট-বাজারে এখন মানুষের উপস্থিতি কমেছে।
নিম্নজলা ভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় এক ফসলী জমির পরিমান বেশি।এসব জমিতে বছরে একটিমাত্র ফসল বোরোধান ফলে। তাই বোরোধান এ জেলার প্রধান ফসলে পরিণত হয়েছে । প্রতি বছরই গোপালগঞ্জ জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে বোরোধানের আবাদ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ৮০হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে বোরোধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ২২৯ হেক্টর, মুকসুদপুরে ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, কাশিয়ানীতে ৬ হাজার ৪১০ হেক্টর, কোটালীপাড়ায় ১১ হাজার ৩০ হেক্টর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৬ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ করা হয়েছে। এ নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ৪২ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমিতে বোরোধানের চাষাবাদ হয়েছে। বাদবাকী ৩৭ হাজার ৯০৩ হেক্টরে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই চাষাবাদ শেষ হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া। এখানে ইতিমধ্যেই ৬০ ভাগ জমিতে বোরোধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বাদবাকী ৪০ ভাগ জমিতে দ্রুত চাষাবাদ চলছে। আশাকরা হচ্ছে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরোধানের আবাদ হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান। এখানে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহের শেষ নেই। তারা উৎসবের আমেজে মাঠে নেমে তারা ধান চাষ করছে। উচু জমিগুলোতে ধান চাষ শেষ হয়েছে। এখন নিচু জমিতে কৃষক দিন-রাত পরিশ্রম করে ধান চাষ করছেন। এখনই টুঙ্গিপাড়ার মাঠ সবুজ ধানে ভরে উঠেছে।এ বছর ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামের কৃষক রমজান আলী (৪৫) বলেন, কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও সার পেয়েছি। এগুলো পাওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ৪ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। গত বছর ২বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে দ্বিগুণ জমিতে ধান চাষ করেছি। আশা করছি এখান থেকে এ বছর গত বছরের চেয়ে ধানের দ্বিগুণ ফলন পাব।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কৃষক অনিমেষ বিশ্বাস (৪২) বলেন, আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ১ বিঘা জমিতে শাক-সবজি করেছি।এগুলো বিক্রি শেষ হয়েছে। এখন ওই জমিতে ধানের চাষ করছি। কোটালীপাড়া উপজেলার চিতশী গ্রামের কৃষক রায় বল্লভ (৫০) বলেন, আমাদের জমি বছরের ৭ মাস জলমগ্ন থাকে। এ জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল বোরোধান ফলে। তাই সংসারের খরচের ধান পেতে আমি ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধানের আবাদ শুরু করি। ইতিমধ্যে প্রায় সব জমির চাষাবাদ শেষ হয়েছে। গত বছর ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও ধানের ভালো ফলন পাব।