মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা : বাগেরহাটের শরণখোলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধের জমি অধিগ্রহনের কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে একটি চক্র একজনের জমি আরেক জনের নামে, ফাঁকা জমিতে গাছপালা ও ঘরবাড়ি দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের পায়তারা করছে। একারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে। বুধবার দুপুরে শরণখোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে মো. মেহেদী হাসান লিখিত বক্তব্যে জানান, শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাধ নির্মানের জন্য উপজেলার ৬নং আমড়াগাছিয়া মৌজার রাজৈর অংশে ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করলে একটি জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাধের অংশে থাকা ঘরবাড়ি, গাছপালার তালিকা সম্পন্ন হওয়ার পর ওই জালিয়াত চক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমান আকন ফাঁকা জায়গায় রাতারাতি ২০-২৫টি ঘর নির্মান করেন। জরিপকারীদের সঙ্গে যোগসাজসে অন্যের জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা নিজের ও তার আত্মীস্বজনের নাম জরিপ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করান। ইতিমধ্যে মিজানুর রহমান আকন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহন শাখা থেকে প্রায় কোটি টাকা চেক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। মেহেদী হাসান জানান, তার মামা আলমগীর হোসেনের নামের ৬০৫ নং খতিয়ানের ৪৭১৫ নং দাগের জমিতে থাকা ঘর প্রতারক মিজানুর রহমান আকন গোপনে তার ভাই এমাদুল আকনের নামে এবং ওই জমির গাছপালা তার আত্মীয় পলাশ হাওলাদারের নামে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মো. সুলতান হাওলাদার জানান, তার ৬০৫ নং খতিয়ানের ৫৩৯৩ দাগের জমিতে কোনো ঘর বা গাছপালা নেই। অথচ গত ২৪ জানুয়ারি জেলা ভূমি অধিগ্রহন থেকে তার নামে (প্রসেস নং-৩০০৭) ঘরবাড়ির মূল্য বাবদ ২লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮ টাকার একটি নোটিশ পেয়ে হতবাক হন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মিজানুর রহমান আকন তার জমিতে ঘরবাড়ি দেখিয়ে ভূমি অধিগ্রন কর্মকর্তাদের সাথে গোপন যোগসাজসে ওই টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এছাড়া রাজৈর এলাকার জামাল উদ্দিন রোকা, রূপিয়া বেগম ও সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের মতো বহু মানুষের জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা তাদের আত্মীয়স্বজনের নামে অধিগ্রহনের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে ওই প্রতারক চক্রটি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত কনসালটেন্ট ফার্ম উপকূলীয় বেড়িবাধ রক্ষা প্রকল্পের (সিইআইপি) শরণখোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম শামীম ও বাগেরহাট ভূমি অধিগ্রহন শাখার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে ওই চক্রটি সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সিইআইপ’র সুপারভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন বাধের ৭০ফুটের মধ্যে যেসব ঘরবাড়ি পড়েছে সিইআইপি শুধু সেই তালিকা করেছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। অভিযোগকারীদের সম্পত্তি জয়েন্ট ভেন্সার সার্ভের (জেভিএস) মাধ্যমে বাগেরহাট ভূমি অধিগ্রহন শাখা জরিপ করেছে। এখানে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান আকন বলেন, আমার ও আমার আত্মীয়স্বজনের নামের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও জমি অধিগ্রহন করায় ক্ষতিপূরণের টাকা আমাদের নামে বরাদ্দ হয়েছে। আমার মাধ্যমে অভিযোগকারীদের কোনো ক্ষতি করা হয়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে কেউ তালিকাভুক্ত হলে তা তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।