বাগেরহাট প্রতিনিধি: টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন সংলগ্ন জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে ঝাকে ঝাকে রুপালী ইলিশ। র্যাব-কোস্টগার্ডসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এখন জলদস্যু আতংক না থাকলেও টানা ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় হতাশায় মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে কাংক্ষিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মুখে। গত দু’দিন ধরে গভীর সমুদ্রে থাকা ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো আসতে শুরু করেছে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজারে। আর এ কারনেই কেবি বাজারের জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।
বৃহস্পতিবার সকালে সরোজমিনে কেবি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত দু’দিনে দিনে সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই করে ফিরেছে প্রায় ১৫টি ট্রলার। ফিরে আসা ইলিশভর্তি এসব ট্রলার কেবি বাজারের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া দাড়াটানা নদীর ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের জালে এখন কাংক্ষিত ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় হাসি ফুটেছে কেবি বাজারের জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মুখে। সেই সাথে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ বাজারের জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে।
বাগেরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের পর্যাপ্ত সরবারহ থাকায় মাছের দাম কম। ৪৫০শ থেকে ৫০০শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০শ টাকা থেকে ৫৫০শ টাকা। ৬০০শ থেকে ৭৫০শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০টাকা থেকে ৭০০শ টাকা করে। এছাড়া ৮৫০শ গ্রাম থেকে ৯০০শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা মধ্যে।
দাড়াটানা নদীর ঘাটে নোঙ্গর ট্রলারের জেলে জাকির হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ভালোই ইলিশ ধরা পড়ছে। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন।
ইলিশ মাছ বিক্রেতা আমজাদ আলী বলেন, বাজারে ইলিশের সরবারহ ভালো। দামও অনেক সন্তা। আগামী সপ্তাহে ইলিশের দাম আরো কমে যাবে।
বাগেরহাট উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে গেছে। ইতি মধ্যে সুন্দবেন সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। গত দু’দিনে ইলিশ বোঝাই ১৫টি ট্রলার কেবি বাজারের সংলগ্ন ঘাটে নোঙ্গর করেছে। এ ট্রলার গুলো থেকে মোটামুটি ভালো পরিমান ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে আড়তে ইলিশ সরবারহ আরো বাড়বে।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি এসএম আবেদ আলী জানান, দীর্ঘ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেছে, অবশেষে নিষেধাজ্ঞা থেকে জেলেদের জালে মাছ পড়তে শুরু করছে। জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছের সাইজও মোটামুটি ভালো, তবে নিয়োমিত বর্ষা হলে আরও ভালো সাইজের বড় বড় ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি জানান।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ খালেদ কনক বলেন, নিষেধাজ্ঞার সুফল জেলেরা পেতে শুরু করেছে। সাগরেও মাছ ধরা পড়ছে। আগামীতে জেলায় ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে।