ইউনিক প্রতিবেদক:
চলতি বছরের এ পর্যন্ত ট্রেনে দুষ্কৃতকারীদের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০ বার। এতে ট্রেনের গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি, আহত হয়েছেন ২৯ জন। তাই ট্রেন, যাত্রী, চালকসহ সকলের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জানালায় নেট লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন রেল মন্ত্রণালয়। ৫ সেপ্টেম্বর রেল ভবনে এ কথা জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এতে শুধু পাথর নিক্ষেপ নয়; জানলা থেকে মোবাইল ফোন, ব্যাগ ছিনতাই, অবৈধ যাত্রী প্রবেশ এবং যন্ত্রাংশ চুরিও একইসাথে বন্ধ হবে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, রেলমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী একতা এক্সপ্রেসের প্রতিটি জানালায় নেট লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। ধীরে ধীরে সকল ট্রেনের জানালায় নেট লাগানো হবে।
এদিকে শনিবার ফুলতলায় খুলনা রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাসার এবং এলাকার ইমাম, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এর উপস্থিতিতে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সভা করা হয়।
খুলনা রেলওয়েতে রেলমন্ত্রীর এমন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমাদের রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল প্রতিদিন খুলনা বিভাগের মধ্যে নির্দিষ্ট স্টেশন ও স্থানে যাচ্ছে এবং আজকেও গিয়েছে। রেলমন্ত্রীর পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই সকল স্টেশনের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাঙ্গে এ বিষয়ে যৌথ মিটিং করা হচ্ছে।’
খুলনা নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইনস্পেক্টর মনির হোসেন রাহাত বলেন, ‘আমরা রেলওয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে এবং অধিকাংশ কিশোর গ্যাং এ ধরণের কাজ অপরাধমূলক কাজ করছে। এ জন্য আমরা কিছু রেল নিকটস্থ বাজার, গ্রাম, রেল স্টেশনে (দৌলতপুর, যশোর, বেজেরডাঙা, ফুলতলা) সচেতনতামূলক কর্মসূচী যেমন: লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সমাবেশ এবং চেয়ারম্যান, গ্রাম-বাজারের মাতব্বরদের মাধ্যমে এ অপরাধ সম্পর্কে অভিভাবকদের এবং কিশোরদের বোঝানো হচ্ছে। আমাদের এমন সচেতনমূলক কর্মসূচী চলছে এবং চলমান থাকবে।’
১ সেপ্টেম্বর উপবন এক্সপ্রেস নামের ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারায় নরসিংদীর দুজনসহ ট্রেনটির অন্তত চারজন যাত্রী আহত হয়েছে। রাত পৌনে ১০টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী রেলস্টেশনে পৌঁছার আগমুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুষ্কৃতকারীদের পাথর নিক্ষেপের ফলে আহত হন সহকারী চালক কাওছার আহম্মদ। কাচের টুকরায় চোখে আঘাত পান।
দেশের নানান রুটে প্রায়ই ঘটছে এরকম ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। সম্প্রতি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে। তাই ওই সব চিহ্নিত এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
চলতি বছরে ১১০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ২৯ জন আহত হলেও কাউকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেননি রেলওয়ে পুলিশ বা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী।