আসাদুল ইসলাম, পাইকগাছা : খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে সরল বাজারের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে জেলা পরিষদের যায়গা দখল করে নির্মিত হচ্ছে ২৬ দোকান! এড. এস এম মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ও তার কয়েক ভাই মিলে মার্কেট নির্মান করছেন।
এলাকাবাসী নির্মানাধীন মার্কেট বন্ধে প্রধানমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রনালয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ ১৬ দপ্তরে অভিযোগ দিলেও ঘুম ভাঙ্গেনি সংশ্লিষ্টদের! অভিযোগ আছে, জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মার্কেট করছে মুজিবুর গং। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যো ব্যপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত এবং মানববন্ধন হলেও টনক নড়ছেনা কর্তৃপক্ষের।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১০০ বছর পূর্বে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ দফাদার একটি পুকুর ও পাড় সহ ৯১ শতক জমি এলাকবাসীর সুপেয় পানি পান করার জন্য জেলা পরিষদ ( ডিস্ট্রক বোর্ড) কে দান করেন। দানের শর্তে আরিফ উল্লেখ করেন এই পুকুরের পানি পানকরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং উক্ত জমিতে কোন স্থায়ী ইমারত তৈরি করা যাবেনা। যদি শর্ত ভঙ্গ হয় তাহলে জমি দাতার কাছে (যারা ওয়ারিশ থাবে) ফিরে যাবে।
১৯৯৭ সালের দিকে স্থানীয়রা এখানে একটি বাজার গড়ে তোলেন। তবে বাজারটি ছিল অস্থায়ী। ২০০৬ সালে ব্যবসায়ীদের মালামাল বিক্রয়ের সুবিধার জন্য একটি চাঁদনী শেঠ নির্মান করেদেন তৎকালীন এমপি।
চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি মজিবুর রহমান ও তার তিন ভাইসহ ভাড়াটে লোক এনে দোকানদারদের দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে উচ্ছেদ করেন। উচ্ছেদ করা স্থানে চলছে মার্কেট নির্মানের কাজ। মার্কেট নির্মানের জন্য জেলা পরিষদের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার পর থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষে মোঃ শফিকুল ইসলাম সরদার থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি মামলা না নিলে আইজি/ ডিআই বরাবর অভিযোগ করেন। পরে আইজি/ডি আইজির নির্দেশে তদন্ত করে ৩০ মার্চ থানায় মামলা নেন ওসি। মামলাটি কোর্টে বিচারাধীন।
সরেজমিনে শুক্রবার দেখা গেছে খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়কের গাঘেষে তৈরি হচ্ছে মার্কেট। গাথুনির কাজ প্রায় শেষ, টিনের ছাওনির জন্য ফ্রেমের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। নির্মানাধীন মার্কেটের সামনে একটি সাইনবোড দেয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে “এই জমির মালিক খুলনা জেলা পরিষদ, দখল সংরক্ষণে খুলনা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ”।
পাইকগাছা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল বলেন, এখানকার অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত গরিব মানুষ মুজিবর কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়ায় তারা এখন চরম কষ্টে আছে। জেলা পরিষদ যদি মার্কেট করতো তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীরা অন্তত দোকানের বরাদ্ধ পেত। এখানে যে ভাবে মার্কেট হচ্ছে তাতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। প্রকাশ্যে ২৬ টি দোকান নির্মান হলেও কর্তৃপক্ষ যেন মুখে কুলুপ এটে বসে আছে। কেউ দেখেও দেখছে না।
পাইকগাছা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাউদ্দিন গাজী বলেন, মুজিবুর রহমান কর্তৃপক্ষের ম্যানেজ করে মার্কেট নির্মান করছে। যেটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। পৌর অভ্যন্তরে এতো বড় স্থাপনা তৈরি হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেননি। এলাকাবাসী সরকারের ১৬ টি দপ্তরে অভিযোগ দিলেও এখনো সুরহা হয়নি।
বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি রজব আলী জোয়াদ্দার বলেন, মহা সড়কের ১০ মিটারের মধ্যে কোন স্থায়ী স্থাপনা করা যাবেনা। কিন্তু কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্যা না করেই তৈরি করছেন মার্কেট। মার্কেট করার জন্য প্রায় ২০ ফুট জেলা পরিষদের পুকুর বালি দিয়ে ভরাট করেছেন। অথচ সরকারী নির্দেশ মতে জেলা পরিষদের দখলে থাকা কোন পুকুর ভরাট করা যাবে না। জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মার্কেট তৈরি করা হচ্ছে।
মার্কেট নির্মানের বিষয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, এই জমি আমার বাপ-দাদাদের। আমি জেলা পরিষদের সাথে হাইকোর্টে মামলা চালিয়েছি। তারপর জেলা পরিষদের সাথে সমোঝোতার মাধ্যমে মার্কেট নির্মান করছি। বাঁকিটা আপনি জেলা পরিষদে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন।
জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য শেখ কামরুল হাসান টিপু ও মহিলা সদস্য নাহার আক্তারের কাছে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন চুকনগরে ও ডুমুরিয়ায় আমাদের মার্কেট হচ্ছে। পাইকগাছায় আমাদের কোন মার্কেট হচ্ছেনা। আমি ঢাকায় খুলনা পৌছে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।