আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : মোংলায় হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস বাসন্তীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ওই প্রধান শিক্ষিকা হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে দু’দফায় তদন্ত হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তার রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ফলে তদন্তের এ গড়িমসি নিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকেরা জানান, গত ২০১৩ সালের ১৭ জুন মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৮নং মধ্য হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন বিশ্বাস বাসন্তী। আর এ স্কুলে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির প্রতিকৃতি সংগ্রহে ৬শ’ টাকার বিপরীতে ৩৬শ’ টাকার ভাউচার করেন। স্কুলে ইন্টারনেট কানেকশন সংযোগ ও ব্যবহার না করে ৫ মাসে ৩৭শ’ টাকা এবং নতুন লাইব্রেরি স্থাপন না করে ৩৫ হাজার টাকা, ক্যামেরা ক্রয়ে ১০ হাজার ৫শ’ টাকা, জার্সি ক্রয়ে ৩ হাজার, সাউন্ডবক্স ক্রয়ে ১৫ হাজার, প্রিন্টার ক্রয়ে ১০ হাজার ৫শ, শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার অ্যাপ্রোন ৩ হাজার, ড্রাম সেট ৭ হাজার ৫শ’, কাবড্রেস ক্রয়ে ৫ হাজার ২শ, অস্থায়ী শ্রেণী কক্ষ নির্মাণে ৩০ হাজার, জেনারেল ফান্ডের ১ হাজার ৮৭৫, ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদাণের নামে ৩ হাজার টাকা আদায়, সিএফএস ফান্ড থেকে ৪ হাজার ৫শ, ওজন মাপার যন্ত্র ক্রয়ে ১ হাজার ৮ টাকার বিপরীতে ২ হাজার ৩শ’ টাকা বিল ভাউচার দেখানো হয়। আর এসব ভূয়া বিল ভাউচারে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই প্রধান শিক্ষিকা। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও যাতায়াতের নামেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজে সময় মতো স্কুলে হাজির না হয়ে উল্টো হুমকি-ধমকি দেন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। স্কুলে নিয়মিত হাজির না হলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকে তার। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় ফি বাবদ রয়েছে তার অবৈধ আয়ের আরেক উৎস। তার এ অনিয়মের বিষয় সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অভিভাবকরা মুখ খুললে তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। গত এক বছরে তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির দু’দফায় তদন্ত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। কিন্তু এ তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ উঠলে সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় ফের তদন্ত করা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস বাসন্তীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ বিষয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল জানান, প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস বাসন্তীর নানা অনিয়মের বিষয় একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাই ওই প্রধান শিক্ষিকা ম্যানেজিং কমিটিকে এড়িয়ে সার্বিক কার্যক্রম নিজের মতো করেই পরিচালনা করছেন।
তবে প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস বাসন্তী তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল তার বিরুদ্ধে নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
স্কুল শিক্ষিকার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বাগেরহাট জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আবদুল গনি বলেন, প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস বাসন্তীর অনিয়মের বিষয় প্রাথমিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।