মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় কোস্টার জাহাজে ডাকাতি

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-১০ - ১৮:১৩

আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায় একটি কোস্টার জাহাজে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। দস্যুরা জাহাজের কর্মচারীদের অস্ত্রের (আগ্নেয়াস্ত্র) মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল সেট ও জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন মালামাল লুটে নিয়েছে। একের পর এক কার্গো ও কোস্টার জাহাজে ডাকাতির ঘটনায় নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী এবং মালিকদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। গত ৭দিনের ব্যবধানে হাড়বাড়িয়া এলাকায় অন্তত ৬টি কার্গো ও কোস্টার জাহাজে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় দস্যুতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সকল নৌরুট অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী ও মালিকেরা জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে আসা অধিকাংশ বড় বড় বিদেশী জাহাজগুলো মুলত পণ্য খালাসের জন্য বন্দর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়াতে অবস্থান নিয়ে থাকে। এরপর সেখান থেকে আমদানী পণ্যগুলো কার্গো-কোস্টারে পরিবহণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়। বিদেশী জাহাজগুলো থেকে পণ্য নেয়ার জন্য হাড়বাড়িয়া এলাকায় সব সময়ই কার্গো-কোস্টার জাহাজের সারি থাকে। গত শুক্রবার রাতে হাড়বাড়িয়া এলাকায় অবস্থানরত একটি বিদেশী জাহাজ থেকে কয়লা বোঝাই করে হাড়বাড়িয়া-০৮ এ এ্যাকংক করে এম,ভি রাফিদ-০১ নামক কার্গো জাহাজটি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৫ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল ওই জাহাজটিতে উঠে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে সকলকে জিম্মি করে নগদ ১৮ হাজার টাকা, ৭টি মোবাইল ও ১শ লিটার ডিজেলসহ অন্যান্য মালামাল (চাল, ডাল, তেল, মসলা) লুট করে নিয়ে যায়। জাহাজটিতে মাষ্টারসহ ১৩ জন ষ্টাফ ছিল। জাহাজের মাষ্টার মো: হাসান বলেন, একটি নৌকায় করে আসা লুঙ্গি, গেঞ্জি ও শার্ট পরিহিত ৫ জন অস্ত্রধারী (আগ্নেয়াস্ত্র) শুক্রবার রাতে আমাদের জাহাজে উঠে আমিসহ জাহাজের সকল ষ্টাফকে জিম্মি করে আমার কাছে থাকা নগদ ১৩ হাজার, অপর ষ্টাফ আক্কাছ আলীর ৫ হাজার টাকা, ৭টি মোবাইল সেট, ১শ লিটার তেলসহ জাহাজের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল মালামাল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি শনিবার দুপুরে মোংলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন’র মোংলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান বাবুল বলেন, এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারী রাতে হাড়বাড়িয়া এলাকায় এম,ভি আলভি, এম,ভি নুর ও এম,ভি ইয়া নুর নামক ৩টি কার্গো জাহাজে এবং ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে এম,ভি মনির কার্গো জাহাজে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপর একই এলাকায় আবারো ৯ ফেব্রুয়ারী এম,ভি রাফিদ-০১ কোস্টার জাহাজে দস্যুতার ঘটনা ঘটলো। তিনি আরো বলেন, হাড়বাড়িয়া এলাকায় একের পর এক কার্গো-কোস্টার জাহাজে ডাকাতির ঘটনায় এরুটে চলাচলকারী নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী ও মালিকদের মধ্যে দস্যুতা আতংক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো: বাহারুল ইসলাম বাহার বলেন, নদী পথে নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণসহ দস্যুতা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় কর্ম বিরতির মধ্যদিয়ে মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল নৌ রুট অচল করে দেয়া হবে।
মোংলার চাদপাই নৌ থানার ওসি মো: আবুল হোসেন শরীফ বলেন, হাড়বাড়িয়া অনেক দূরে। আমরা কাছাকাছি পশুর ও শ্যালা নদীতেই বেশির ভাগ ডিউটি করে থাকি। আর হাড়বাড়িয়া এলাকা শরণখোলা থানার মধ্যে পড়েছে।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন’র অপারেশন অফিসার লে: হায়াত ইবনে সিদ্দিক বলেন, এ ধরণের কোন খবর আমাদেরকে কেউ দেয়নি। তাৎক্ষনিকভাবে খবর পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। তারপরও মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় দস্যুতাসহ সকল ধরণের অপরাধ দমনে কোস্ট গার্ডের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।