মনিরুল হক মনি, বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোংলা দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। প্রতিষ্ঠার পর গত অর্থবছরে বেশী রাজস্ব আয় করলেও এখনো জাহাজ সংকটের কারনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছেনা। এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন -নতুন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সরঞ্জামাদি সংযুক্ত করা হলেও বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংকট, সিঙ্গাপুরসহ অন্যন্য বন্দরের সাথে সরাসরি কন্টিনারবাহী ফিডার জাহাজ চলাচল না থাকা ও পদ্মা নদীর কারনে কন্টিনারবাহী লড়ি সড়ক পথে না আসতে পারায় মোংলা বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এখনো কাংখিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থায় একদিকে ফাঁকা পড়ে থাকছে মোংলা বন্দরের কন্টেইনার ইয়ার্ড, অন্যদিকে কন্টেইনার জট লেগেই রয়েছে চট্রগ্রাম বন্দর ও ঢাকার কমলাপুর আইসিডি কন্টিইনার ইয়ার্ডে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকার মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কাজে লাগাতে ও এই বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘ দিনের বিড়াম্বনা দূর করতে গত ১ জুলাই থেকে মোংলা কাস্টম হাউজের পূর্নাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশের অন্য বন্দরগুলোর তুলনায় মোংলা বন্দরে ব্যবসায়ীদের কনটেইনার প্রতি সর্বনি¤œ ১ হাজর ৪ শত পঞ্চাশ ডলার ভাড়া ধার্য করার পরও বাড়েনি এই বন্দরে কন্টেনারবাহী জাহাজের সংখ্যা। এই বন্দরে মাসে দুই একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসলেও তার প্রায় ৯৬ ভাগই থাকে এলপিজি সিলিন্ডার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পন্য। তবে, গত অর্থবছরে মোংলা বন্দরে ১৭ হাজার মেট্রিক টন কন্টেইনারবাহী পন্য আমদানী বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টনে। গত অর্থবছরে ১৭ হাজার মেট্রিক টন কন্টেইনারবাহী পন্য আমদানী বাড়লেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সর্বোচ্চ সক্ষমতা অর্ধেকেও বেশী কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। কন্টেইনার ইয়ার্ডের অধিক্ংশ স্থান এখন খালি পড়ে রয়েছে। চট্রগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার যায়গা না থাকা ও ঢাকার কমলাপুর আইসিডি কন্টেইনার ইয়ার্ডে কন্টেইনার প্রতি ভাড়া বাড়িয়ে ২ হাজার ৯ শত ডলার করা হয়েছে। অন্যদিকে কন্টেইনার প্রতি বাড়া কম মোংলা বন্দরে কন্টেইনারবাহী জাহাজ না থাকায় ব্যাবসায়িদের দ্বিগুন ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে করে আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের।
এবিষয়ে বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও বন্দর ব্যবহারকারী শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন মোংলা বন্দরে আমদানীÑ রপ্তানীকারকরা যাতে বেশী আগ্রহী হয় সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাগেরহাট চেম্বার সচেষ্ট রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা চেম্বার নেতা ও ব্যবসায়ীরা দেশের আমদানী-রপ্তানী বানিজ্যে আরো গতি আনতে রাজধানীর সব থেকে কাছের মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কাজে লাগাতে সরকারের শীর্ষ মহলের কাছে দাবী জানিয়েছি। পাশাপাশি দ্রুত সিঙ্গাপুর থেকে চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত কন্টেইনারবাহী ফিডার জাহাজ চলাচল চালু করা গেলে মোংলা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে। এতে করে আমদানী-রপ্তানী বানিজ্যেও জড়িত ব্যবসায়ীরা চট্রগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ইয়ার্ডে কন্টইনার জট ও ঢাকার কমলাপুর আইসিডি কন্টেইনার ইয়ার্ডে কন্টেইনার প্রতি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ১৫ শত ডলার বেশী ভাড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।এছাড়া এখানের কাস্টম কমিশনার ব্যাবসায়ী বান্ধব হওয়ায় অনেক বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষাপাচ্ছে আমদানী কারকরা ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর একেএম ফারুক হাসান বলেন, রাজধানী ঢাকার সাথে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কম হলেও পদ্মা নদীর কারনে কন্টিনারবাহী লড়ি সরসরি সড়ক পথে মোংলা বন্দরে আসতে পারেনা। একারনে মোংলা বন্দর ব্যাহারে ব্যাসায়ীদের আগ্রহ কম। বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংকট সমাধানে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত করা গেলে সরাসরি বন্দর জেটিতে ৮ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের মাদার ভেসেল সহজে আসতে পারবে। পাশাপাশি আগামী বছরের মধ্যে পদ্মাসেতু চালু হবে। এসময়ে সিঙ্গাপুর থেকে চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত কন্টেইনারবাহী ফিডার জাহাজ চলাচল চালু করা গেলে এই বন্দর ব্যবহারে ব্যবসাীরা বেশী করে আগ্রহী হবে। এতকরে মোংলা বন্দরের কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগমেনে সংখ্যা কয়েকগুন বাড়বে। তবেই মোংলা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে।