সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-০৮ - ০২:২৪

ফারুক হোসেন, সাঁথিয়া, পাবনাঃ পাবনার সাঁথিয়ায় এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজের চাহিদা পুরণে সক্ষম পাবনা জেলার উৎপাদিত পেঁঁয়াজ। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আবাদ হয় সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায়। সুষ্ঠ তদারকি ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে এলাকার কৃষকেরা ও সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বছর শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক।

পাবনা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর প্রায় ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর, সুজানগর ২০ হাজার হেক্টর। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায়।
্েখাঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে। গতবারের চেয়েও এ বছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও দাম নিয়ে চিন্তায় পেঁয়াজ চাষিরা। তারা পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়েও শংকায় রয়েছে । গতবছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছিল। ঘরে উঠনোর আগেই শিলা বৃষ্টিতে সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এ এলাকার কৃষকের। চরম লোকসানের মুখে পড়েছিল কৃষক। এবার সে খরচ পুষিয়ে নিতে পেঁয়াজের ন্যায্য দাম আশা করছে এলাকার কৃষকেরা ।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজের মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া,বেড়া, সুজানগর এলাকায়পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। অন্যদিকে মুলকাটা পিয়াজেরও বাম্পার ফলন হয়েছ্।ে এবার বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ মণ মুলকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে প্রতি মণপেঁয়াজ ১ হাজার’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকায়। সাঁথিয়ার প্রত্যান্ত বিল এলাকায় দেখা যায় মাঠকে মাঠ শুধু পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। যতদুর চোখ যায় শুধু পেঁয়াজ আর পেঁয়াজের ক্ষেত। কয়েকদিন আগে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় একে পেঁয়াজের জন্য মধু হিসাবে গণ্য করছে কৃষকেরা । এখন দানা মোটা হওয়ার সময় বলে বৃষ্টি খুবই উপকারে আসবে পেঁয়াজের।
সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের আব্দুল কদ্দুস মেম্বর জানান, পেয়াঁজের বীজ,কীটনাশক, জমি চাষসহ কৃষি শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ করতে মওসুমের শুরুতেই চাষিদের শ্রমে-ঘামে ফলানো পেঁয়াজ লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে মোটা/ দানার পেঁয়াজের আবাদে খরচ যেমন বেশী তেমনী ফলনও বেশী। সঠিক দাম না পেলে এখানেও লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের। একই উপজেলার ক্ষিদির গ্রামের ওয়াজেদ মন্ডল ও সুজানগরের বামনদি গ্রামের রজব আলী জানায় , প্রতি বিঘা জমিতে বীজ ক্রয়,জমি চাষ, চারা তৈরি,সার,কীটনাশক, চারা রোপন, পানি সেচ থেকে পেঁয়াজ তোলা পর্যন্ত শ্রমিকদের মুজুরি বাবদ খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। পৌরসভাধীন ভবানীপুর গ্রামের আঃ রাজ্জাক ও গোপিনাথপুর গ্রামের আঃ কাদের মোল্লা জানান, এক বিঘা পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আমার ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেত গিয়ে এ বছর যে খরচ হয়েছে তাতে ন্যায্য মুল্যে না পেলে অনেক লোকসানে পড়ে যাব।
সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষিদির গ্রাম ও বড় নারিন্দা গ্রামের পিয়াজ চাষী সরোয়ার জানায়, কৃষি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যদি ভালভাবে মাঠে সরেজমিন তদারকি করতো এবং চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসতো তাহলে সঠিক পরিচর্যা করে ভাল উৎপাদন করা যেত। তাদের অভিযোগ প্রায় দেড় মাস হলো কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা এলাকায় আসেন না। অনেক সময় পেঁয়াজে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিলে সঠিক পরিচর্যা করতে হিমসিম খেতে হয়।
সাঁথিয়া উপজেলার কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ রঞ্জন কুমার প্রামানিক জানান, একজন সুপারভাইজার কে কয়েকটি গ্রামের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা জনবল সংকটে আছি। যেখানে থাকার কথা ৪৭জন সেখানে কর্মরত আছে ৩৩জন। এ নিয়েই যথাসাধ্য চেষ্টা করে কৃষকদের সেবায় নিয়োজিত আছি।
সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঈনুল হক সরকার জানান, এ বছর আমাদের কোনরুপ তদারকির কমতি নেই। তবে জনবল যা থাকার কথা তা নেই তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কৃষকদের যথাসময়ে পরামর্শদানে।