সাঁথিয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া 

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-১৮ - ১২:৪৭

ফারুক হোসেন,সাঁথিয়া (পাবনা) : তিন হরফের ছোট একটি নাম ‘মাদক’। যা অপরাধের ”জনক”! রকম রকম মাদকের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করেছে ইয়াবা। আকারে ছোট হলেও তার নেশার স্বাদ মাদকাশক্তদের কাছে খুব প্রিয়। বহনে খুবই সহজ। মূল্য চড়াতে বিক্রেতারা রাতারাতি হচ্ছে বিত্তবৈভবের মালিক। অনিশ্চিত অন্ধকারের অপরিনত ও অকাল মৃর্ত্যর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। ধবংস হচ্ছে দেশ। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রতিদিন। দুই দশকে এলাকায় প্রায় ৫০ জন মাদকাসক্তে মারা গেছে। এটা পাবনা জেলার বৃক্ষ সুশোভিত কৃষি প্রধান উপজেলা সাঁথিয়ার হালচিত্র।
জানা যায় ৩৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সাঁথিয়া উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা। সম্ভাবনাময় শান্তির জনপদ সাঁথিয়া বর্তমানে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিনত হয়েছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে মাদকাসক্তদের তালিকা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মরন নেশায় জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী যুবকেরা যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। নেশার টাকা যোগান দিতে এরা খুন, চুরি, ছিনতাই, গরু চুরি, মুক্তিপন, জুয়া, সন্ত্রাসী কার্যাকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধ অবলীলায় করে যাচ্ছে। অতিসম্পতি আসাদুল ও আশরাফুল নামের দুই সহোদর নেশার টাকা যোগান দিতে রনি নামের এক স্কুল পড়ুয়া অটোভ্যান চালককে হত্যা করে। মোবাইলসহ মুল্যবান নিত্য প্রয়োজণীয় জিসিন চুরি হচ্ছে অহরহ। এসকল দু-একটা চুরি হাতে নাতে ধরলেও মাদক সেবীরা এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সাঁথিয়াসহ জেলার পর্বাঞ্চলে প্রায় দুই দশকে মাদকাশক্ত হয়ে অর্ধশতাধিক জনের মৃর্ত্যু হয়েছে। তারা হলো- বনগ্রামের বেলাত, ইন্দা, আমির, আসাই, জলিল, আসান, নুতাই, কুমিরগাড়ী গ্রামের ইকরাম, বকুল, গাঙ্গুহাটী গ্রামের হানিফ, বাবু, মাধপুরের নজিমুদ্দিন, কালু, রঘুনাথপুরের সাজাই, পুটকা, কায়মুদ্দিন, সড়াডাঙ্গীর কাশেম, হারুন, বোয়াইলমারীর শহিদ মেম্বর, হানিফ, রজব, বৃহস্পতিপুরের আশকার, কাশিনাথপুর এলাকার সেকেন্দার, মনুই, লকাই, করমজা গ্রামের লুতু, শুকাই, পন্টুসহ অনেকে। উপজেলার প্রায় অর্ধশত স্পটে মাদক ব্যবসা জমজমাট। সাঁথিয়া পৌরএলাকা, গোপীনাথপুর বাজার, করমজা, পাটগাড়ী, তলটবাজার, কাশিনাথপুর অঞ্চল, আত্রাইশুকা, বিষ্ণবাড়িয়া, মিয়াপুর, রসুলপুর, গৌরিগ্রাম, বনগ্রাম, গাঙ্গুহাটি ইটভাটা, আতাইকুলা, রঘুনাথপুর, বৃহস্পতিপুর, সড়াডাঙ্গী, বোয়াইলমারী, গনেশপুর, চৌবাড়িয়া, ধুলাউড়ি, নাগডেমড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ছাড়াও হাটবাজার, বাসষ্ট্যান্ড, চায়ের দোকান ও পানবিড়ির দোকানেও ইয়াবা, গাজা, হেরোইনসহ সমকালীন মাদক প্রকাশ্যে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বণ করছে।
উপজেলা বিষ্ণুপুর গ্রামের এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে টিনের ঘরের চার পাশে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে মাদক বিক্রির সন্ধান পায় থানা পুলিশ। এছাড়াও পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৩ কেজি গাজা, ৬০০ বোতল ফেন্সিডিল, ৭০০ পিস ইয়াবা, জাল টাকাসহ বড় বড় মাদকের চালান আটক করে। আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিতে নারী, শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে এ ব্যবসায়। পুলিশের কৌশলের পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। তারপরও পুলিশ তাদের আটক করছে। জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মাদকসহ আটক করে আদালতে প্রেরন করলেও আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বেড়িয়ে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। শান্তি প্রিয় এলাকাবাসীর অভিযোগ কিছু রাজনৈতিক নেতা, সমাজপতি ও জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু অসাধু পুলিশকে ম্যানেজ করে রমরমা ভাবে ব্যবসা করছে। কম সময়ে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক, যেন আঙ্গল ফুলে কলাগাছ। এ ব্যবসায় ঝুকে পড়ছে হতাশাগ্রস্থ যুবক, নারীরাও পিছিয়ে নেই। মাদকের ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সমাজ। এছাড়াও উপজেলার ২৫৬টি গ্রামের ছোট-বড় হাট বাজারে অবাধে পাওয়া যাচ্ছে মাদক।