সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে

প্রকাশঃ ২০২৩-০৩-২২ - ১৩:০১

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাঙ্খিত। গত রবিবার মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আট ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে চালকসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত আরো ২৫ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পদ্মা সেতু থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে, নিরাপত্তাবেষ্টনীহীন এলাকায়।

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীন সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেতু থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নিরাপত্তাবেষ্টনীহীন এলাকায়। সড়কে নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিয়ম অনুযায়ী, এমন সড়কে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকা বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে ক্ষতি কম হতো, এত মানুষের মৃত্যু হতো না।

নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ৭ হাজার ২৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে শুধু মহাসড়কে ২ হাজার ৩১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর সড়কের বাইরে বা খাদে পড়ে এবং উল্টে ৮৪৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বুয়েটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার ৮৪ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। সড়কে এমন নৈরাজ্যের শেষ কোথায়? নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। কিন্তু গত সাড়ে ৪ বছরেও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর বিধিমালা প্রণীত হয়নি। আইনের কিছু কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কের সার্বিক অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেই চলেছে বেপরোয়া বাস দুর্ঘটনা। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার-শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ।