ইউনিক ডেস্ক : চলছে চৈত্র। দিনের বেলা তাপমাত্রা বেশ। এরই মধ্যেই শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ফলে বেড়েছে শরবতের কদর। আর তাতে বেড়েছে লেবুর ব্যবহারও। সেই লেবুর মধ্যে বেশি চলছে বারি লেবু-৪। সিডলেস (বীজহীন) বারমাসী সুগন্ধি এই লেবু উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এই লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে মো. সামাউল ইসলামের বাগানে। ১২ হাজার লেবুর গাছ থেকে এ বছরে তার আয় প্রায় কোটি টাকা। ফলে খুশি এই কৃষক।
কৃষক সামাউলের (৫৫) বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামে। প্রতিদিন তিনি তার বাগান থেকে আট থেকে ১০ হাজার লেবু বিক্রি করছেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনি বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ করেন। লেবু থেকেই বছরে তার আয় হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। লেবু বাগান করে এলাকায় তিনি এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার লেবু যাচ্ছে। প্রতিদিন পাইকারি বয়বসায়ীরা তার বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যান। এ লেবু তারা গোপালগঞ্জ ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন।
সামাউল ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সহযোগিতায় তিন বছর আগে কদমপুর গ্রামের ১৬ একর জমি লিজ নিয়ে সিডলেস বারমাসী বারিলেবু-৪-এর চাষাবাদ শুরু করি। আমরা বাগানে ১২ হাজার লেবু গাছ আছে। প্রথম বছর থেকেই আমি লেবুর ফলন পেতে শুরু করি। ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এখন রমজানে লেবুর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
সামাউল ও বলেন, ‘আকার ভেদে প্রতিটি লেবু ৬ থেকে ৯ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছি। এ মাসে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হবে। সারাবছর এখান থেকে কোটি টাকার লেবু বিক্রি করি। বাগানে এসে পাইকেররা নগদ টাকায় লেবু কিনে নিয়ে যায়।’
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.এমএম কামরুজ্জামান বলেন, মোঃ সাউল ইসলাম একজন সফল কৃষক। তিনি ৩ বছরে আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাক নাশক, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম খায়রুল বাশার বলেন, ‘এ জাতের লেবু প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ফলন দেয়। ৩৬৫ দিনে এ জাতের একটি লেবু গাছ ৫০০ থেকে ৬০০টি লেবু ফলন দিতে সক্ষম। তাই প্রতিদিন গড়ে একটি গাছ থেকে দুটি লেবু সংগ্রহ করা যায়। লেবুটি সুগন্ধযুক্ত, তাই শরবত ও সালাদে এ লেবু সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। সারা দেশে বারমাসী এ লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ লেবু চাষ করে সামাউলসহ আরও অনেকে লাভবান হয়েছেন। এ কারণে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলে লাভজনক এ লেবুর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।’
কদমপুর গ্রামের কৃষক মো. ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, ‘সামাউল একজন সফল কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। তিনি এখানে কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। এখন লেবুতে বাজিমাত করেছেন। তিনি একই জমিতে বারবার এক জাতীয় ফসল আবাদ করেন না। তাকে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক অনুকরণ করে লাভবান হচ্ছেন।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারের আড়তদার টুটুল বলেন, ‘সামাউলের লেবুর সাইজ বড়, রস বেশি ও সুগন্ধি। এ কারণে তার লেবু একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি। আমি তার লেবু বিভিন্ন জেলায় চালান করি।’