ঢাকা অফিস :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তান কর্তৃক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যাকে ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশ ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এ নিহতদের স্মরণ করে থাকে। সেহেতু, এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার এবং এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (ঐজঈইগ)।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) একটি ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১শ ৯৫ জন বর্তমান এবং প্রাক্তন সদস্যদের বিচারের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাদের গণহত্যার জন্য দায়ী হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল বলে জানান এইচআরসিবিএম ।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অ্যাডেল নাজারিয়ান এবং এতে লেমকিন ইনস্টিটিউটের এলিসা ভন জোডেন-ফোরজি এবং আইরিন ম্যাসিমিনোর একটি বিবৃতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে লেমকিন ইনস্টিটিউটের বক্তারা সশরীরে সেখানে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘আমাদের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, আমরা ১৯৭১ সালের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সমস্ত বাংলাদেশিদের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে জোরদার করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি যে, অতীতের গণহত্যার স্বীকৃতি সামাজিক ন্যায়বিচার, টেকসই শান্তি এবং ভবিষ্যতের গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রসঙ্গত ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নয় মাস ধরে নির্বিচারে হত্যা, নিরপরাধ মানুষদের নির্যাতন এবং নজিরবিহীন ধর্ষণের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশকে ‘মৃত্যুপুরীতে’ পরিণত করে। এটি ছিল পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে বিশ্বের বৃহত্তম গণহত্যাগুলোর একটি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়।
পাকিস্তানিরা নারী ও শিশুসহ ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে। মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকদের দাবি, এখনও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক গণকবর অজ্ঞাত অবস্থায় রয়েছে।
সম্মেলনে এইচআরসিবিএম’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয়া সাহা এবং এইচআরসিবিএম’র সভাপতি ধীমান দেব চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ যদি স্বীকৃত না হয় এবং শাস্তি না হয়, তবে তা বিশ্বকে আরও আগ্রাসন এবং দুর্ভোগের দিকে পরিচালিত করবে।’
প্রিয়া সাহা মার্কিন আইন প্রণেতাদেরকে বাংলাদেশে (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যার আনুষ্ঠানিক নিন্দা করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেসিকা লি রেহমানের ২০১২ সালের একটি কেস স্টাডি উদ্ধৃত করে প্রিয়া ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণকে ‘বিশুদ্ধ সন্ত্রাসবাদের উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তার জিওফ্রে ডেভিসের কাজের কথাও তুলে ধরেন, যাকে ১৯৭১ সালের মে মাসে ধর্ষিতা মহিলাদের দেরিতে গর্ভপাতের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ঢাকায় আনা হয়েছিল।
ধীমান দেব চৌধুরী হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টকে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু ছিল। তারা ১৯৭১ সালে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। পাশাপাশি অনেক বিদেশি নাগরিকও তাদের জীবন হারিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যার সময়, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষাধিক বাংলাদেশি নাগরিকের ক্ষতি করেছিল। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতাকে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যার একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৭১ সালে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দুই লাখ নারী তাদের সম্ভ্রম হারান। তখন এক কোটিরও বেশি লোক আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যেতে বাধ্য হয়েছিল।