ঢাকা অফিস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মঞ্চ স্থাপন করে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে নিজেদের দলীয় প্যানেলের পরিচিতিসভা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ৷ আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷
ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধির ৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো ছাত্রসংগঠন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী গেইট, তোরণ, ঘের নির্মাণ, প্যান্ডেল, ক্যাম্প, শামিয়ানা, মঞ্চ স্থাপন ও আলোকসজ্জা করতে পারবেন না।’
তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন,তাঁরা কোনো মঞ্চ স্থাপন করেননি৷ তিনি বলেন,’এটি মঞ্চ ছিল না৷ এটি ছিল একটি পাটাতন৷ মঞ্চ হলে সেটি আরও উঁচু হতো প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই আমরা পরিচিতি সভা করেছি৷’
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলের নাম সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ৷ ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি ও ১৮টি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে সক্ষম হয়েছে একমাত্র ছাত্রলীগ৷ ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্রসংগঠন বা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ কোনো ছাত্রসংগঠনই ডাকসু ও হল সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি৷
ছাত্রলীগ প্যানেলের এ পরিচিতিসভায় অংশ নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়,বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার নেতা-কর্মীরা। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলের ২৫ জন প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন৷ একে একে প্রার্থীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে নির্বাচিত হলে কী কী করবেন,তা তুলে ধরেন এবং নিজেদের ব্যালট নম্বর উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চান৷
নিজের পরিচয় দিয়ে ভোট চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী মাজহারুল কবির শয়ন সভায় বলেন,’আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে আস্ফালন করছে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নামে একটি গ্রুপ তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে৷ তারা বলেছিল, দাবি আদায়ের পর তাদের প্ল্যাটফর্ম ভেঙে দেওয়া হবে৷ কিন্তু সেটি তারা করেনি৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে, নামকাওয়াস্তে তাদের নেতা হয়ে তারা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে৷’
৯(ক) ধারায় বলা হয়েছে,নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র বা সংগঠনকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান, গুজব ছড়ানো বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা,ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য প্রদান করা বা গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা যাবে না৷
ছাত্রলীগের প্যানেলের পরিচিতিসভায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা এ ব্যাপারে প্রশাসনের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে৷
প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচয়পর্ব শেষে ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচনের ইশতেহার উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে প্যানেলটির জিএস প্রার্থী গোলাম রাব্বানী৷
ছাত্রলীগের ইশতেহারে অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা প্রণয়ন ও আপৎকালীন সমাধান হিসেবে দ্বিতল বা ত্রিতল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল সিটের নিশ্চয়তা, সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স ও সাত কলেজের অধিভুক্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা, গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনা, অযৌক্তিক সব বর্ধিত ফি বাতিল, ক্যাম্পাসে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ, ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস, আধুনিক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ, শিক্ষা সফরের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোতাহার হোসেন ভবন ও মোকাররম ভবনে ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন, সব শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু, হলের পাঠকক্ষে আসন বৃদ্ধি, সমতাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ক্যানটিনের পুরোনো নিয়ম পরিবর্তন, নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর বর্ণাঢ্য নবীনবরণের আয়োজন ইত্যাদি