গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাপ শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা হওয়ার কারণে এখানে যিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন তিনি নিশ্চিত মেয়র নির্বাচিত হবেন।
এখানে আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কোন দলের মেয়র প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। এমন কি স্বতন্ত্র কোন প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে যাদের নাম শোন যাচ্ছেন তারা হলেন, বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম অহিদুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা কমল সেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দাম, উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগম ও এ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার। এ সকল প্রার্থী সকলেই মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।
সম্ভাব্য এ সকল প্রার্থীর ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা পৌরসভা। প্রতিদিনই প্রার্থীদের সমর্থনে চলছে মিছিল, মিটিং, শোভাযাত্রা। তবে সম্ভব্য এ সকল প্রার্থীরা ভোটারদের দারে দারে না গিয়ে মনোনয়ন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দারে দারে ঘুরছেন। কিন্তু এখানের মনোনয়নের বিষয়টি সম্পূর্ন নির্ভর করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।
১৯৯৭ সালে ঘাঘর ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে কোটালীপাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর আয়তন ছিল ২.০৬ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৯ সালে কোটালীপাড়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৫ সালের নির্বাচনে এইচ এম অহিদুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো এইচ এম অহিদুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়ে মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে দাবি করেন।
অপরদিকে প্রথম পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শেখ কামাল হোসেন পৌরসভার অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করেছেন বলে জানান।
তৃতীয় দফা নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঘাঘর ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এর বর্তমান আয়তন হয় ১০.৯৭ বর্গ কিলোমিটার। লোক সংখ্যা ২০ হাজার। মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৩ শত ১৫ জন।
মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভাকে সড়ক বাতি দ্বারা আলোকিত ও নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ একটি আধুনিক পৌরসভায় রুপান্তর করেছি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক স্থাপন, আধুনিক নিউ কিচেন মার্কেট ও সুপার মার্কেট, পৌর বাস টার্মিনাল, পৌরসভার প্রতিটি বাড়ি বাড়ি পাকা ও আধা পাকা রাস্তা, আধুনিক ঈদগাহ, মসজিদ, মন্দির, শ্বশান ঘাট, কবরস্থান, ড্রেন, গনশৌচাগার, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাস্টবিন ও ব্রিজ নির্মান করেছেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, আমি আশাকরি আমার কাজের মূল্যায়ন হিসেবে আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন বলেন, আমি পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
দলীয় মনোনয়ন পেতে ঘাঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদারও আশাবাদি। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমি ঘাঘর ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এই কাজের মূল্যায়ন হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দাম বলেন, ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করেছি। দীর্ঘ দিন উপজেলা সে¦চ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক হিসেবে আছি। এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। আমি আমার নিজস্ব অর্থায়নে পৌরসভায় অনেক সেবা মূলক কাজ করেছি। আমি আশাবাদি দল আমাকে মনোনয়ন দিবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক বলেন, নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তা হলে আমি নির্বাচন করবো। আমাকে মনোনয়ন না দিলে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমি তার পক্ষে নির্বাচন করবো।
উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগম বলেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ণ নিয়ে কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে নারী উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করবো।
উল্লেখ্য কোটালীপাড়া পৌরসভার নির্বাচনের ঘোষিত তফশিল মোতাবেক আগামী ১ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন এবং আগামী ২৯ মার্চ এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।