উথোয়াই মারমা জয়, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ লামার প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল থেকে যার সাফল্য আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে, শত প্রতিবন্ধকতা মাঝেও জুমিয়া বাবা উমং মারমা ও গৃহিনী মা উয়ইংছা মারমা বড় ছেলে ক্য ক্য মারমা বিদেশের মাটি থেকে ছিনিয়ে এনেছে ভুটানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডশীপ জুডো প্রতিযোগীতায় প্রথম স্বর্ণ পদক।
গত ৮জুন, ২০১৭ সালে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডশীপ জুডো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চল ত্রিশডেবা পাড়ার মারমা সম্প্রদায়ের ছেলে ভুটান ও নেপালের প্রতিযোগীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক অর্জন মাধ্যমে শুধু লামার মুখ উজ্জ্বল করেনি, উজ্জ্বল করেছে সমগ্র বাংলার মুখ।
লামা উপজেলায় সদর থেকে ৩০কিলোমিটার দূরে যার পাড়া। যেখানে যেতে চাঁদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। তেমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছেলে ক্য ক্য মারমা, যার ঝোঁক ছিলো স্কুল জীবন থেকে খেলাধুলার প্রতি। বর্তমানে সাভারে বিকেএসপিতে একাদশ প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট বেলায় নিজ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বড় হওয়ার স্বপ্নে পাড়িই জমিয়ে ছিলো আলীকদম কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহারে। যেখানে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সে লামা মহামুনি শিশু সদনে পা রাখে। এখানে ওস্তাদ সিংমং এর অনুপ্রেরণায় তার জুডোর হাতে খড়ি। একদিকে হত দরিদ্র জুমিয়া পরিবার তার লেখাপড়া খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলো, অন্যদিকে তার জুডো স্বপ্ন। এ অবস্থায় তার মামা অংচিং মারমা এর সহায়তায় ২০১৩ সালে সাভারের বিকেএসপিতে জুডো ভর্তি প্রতিযোগিতায় সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের সাথে লড়াই করে বাছাইকৃত দুই জনের মধ্যে ক্য ক্য মারমা একজন হয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এখানে স্বপ্নের সিঁড়িতে লেখাপড়া পাশাপাশি তার শিক্ষক (কোচ জুডো) আবু বক্কর ছিদ্দিক ও ফারহানা হালিম নেন্সির অনুপ্রেরণায় সে জুডো সাধনায় আত মগ্ন হয়ে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অধম্য সাধনা করে। তার প্রথম সাফল্য আসে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত বিকেএসপি কাপে দ্বিতীয় হয়ে সিলভার পদক অর্জনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল এ ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক জুডো অঙ্গনে তার প্রথম পর্দাপণ। এখানে ভুটানের ৩ জন ও নেপালের ১ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ পদক লাভ করে। পাহাড়ি এ তরুণ্যের সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা ১৮জুন রবিবার নিজ উদ্যোগে তাকে সম্মাননা প্রদান করে আরো অনুপ্রাণিত করেন এবং তার ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
তার এই সাফল্যের কথা জানতে চাইলে ক্য ক্য মারমা বলেন, বিকেএসপি’র হয়ে খেলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এ জয় সমগ্র বাংলাদেশের। আমি পাহাড়ের ছেলে, সাব গেমস পার হয়ে গ্রিক পৌরাণিক দেবতা জিউসের র্তীথ স্থান অলিম্পাস পর্বত ও অলিম্পাস মাঠ ছোঁয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারলে আরো আনন্দিত হবো বলে সে জানায়।