খুমেক হাসপাতাল পরিচালকের কথিত বন্ধু ও পিএ’র কাছে জিম্মি!

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-২২ - ১৯:১৭

ডাক্তার, নার্স- কর্মকর্তা- কর্মচারিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ

কামরুল হোসেন মনি : দিনকে দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নানান অনিয়মে ও দুর্নীতি বিষয় বেরিয়ে আসছে। হাসপাতালের পরিচালকের কথিত বন্ধু লিটন ও তার ছেলে ইমন দুই বাপ-বেটার কাছে হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। কথিত ওই বন্ধু ও পিএ’র বিরুদ্ধে হাসপাতালের কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন হাসপাতালের পরিচালক। এতে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে, অফিসের কাজের সময় পরিচালকের কক্ষে বসে অফিসিয়াল কাজে খবরদারি করেন এক বহিরাগত ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির ছেলে পরিচালকের পাশের চেয়ারে বসে তার পি.এ পরিচয় দিচ্ছেন। পরিচালকের অঘোষিত পি.এ বলে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই পরোয়া করেন না ওই আউটসোর্সিং কর্মচারী। তার পিতা পরিচালকের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের ঠিকাদারী কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এক কথায় অনেকটা বাপ-বেটার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি। এতে হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব স্টাফদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর থেকেই আনোয়ার হোসেন লিটন নামের নগরীর নিরালার এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তিনি পরিচালকের বন্ধু পরিচয় দিলেও দু’জনের বয়সের তারতম্য অনেক। এছাড়া তিনি দেশের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার ছোটভাইর বন্ধু হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেন। খুলনা থানা থেকে সম্প্রতি বদলী হওয়া অফিসার ইনচার্জও ওই ব্যক্তিকে নিয়ে একদিন খুমেক হাসপাতালে যান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি একজন ঠিকাদার হিসেবে চেনেন।
এদিকে, খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি প্রায়ই হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে খবরদারি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে সম্প্রতি হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাজেহাল হয়েছেন। ওই ব্যক্তির ছেলেসহ এ পর্যন্ত আটজন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরীচ্যুৎ করে তদস্থলে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন পরিচালকের ওই কথিত বন্ধুর ছেলেও। যিনি পরিচালকের কক্ষেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকেন। সম্প্রতি ওই আউটসোর্সিং কর্মচারী হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে লাঞ্ছিত করেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে নার্সরাও পরিচালকের তোপের মুখে পড়েন। এর খেসারত দিতে হয় সেবা তত্ত্বাবধায়ককেও। এছাড়া ওই আউটসোর্সিং কর্মচারী হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফার্মেসীতে গিয়ে ফার্মাসিষ্টদের চেয়ার দখল করে বসে থাকেন এমন নজিরও রয়েছে। ওই বাপ-বেটার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখায় খুলনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরির দায়ে বদলী হওয়া খুমেক হাসপাতালে যাওয়া একজন ফার্মাসিষ্টকেও ইনচার্জ করা হয়। এর মাধ্যমে হাসপাতালের ওষুধসহ অন্যান্য মালামাল বিনা স্লিপে বাইরে পাচার করা হয় এমন অভিযোগও রয়েছে। কথিত রয়েছে কথিত ওই পি.এ পরিচালকের সরকারি গাড়ি নিয়ে মাঝে-মধ্যে রূপসা সেতুসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান। বিষয়টি অনেকটা দৃষ্টিকটু বলে অনেক চিকিৎসক পরিচালককে বলতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছেন। আনোয়ার হোসেন লিটন ও তার ছেলে কাইয়ুম হোসেন ইমনের বিরুদ্ধে হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে যিনিই প্রতিবাদ করেছেন তিনিই নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানান, বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, মনে হচ্ছে হাসপাতালটি বাপ-বেটার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
হাসপাতালের সামনের মটর সাইকেলের গ্যারেজটি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করেন এক সংখ্যালঘু ব্যক্তি। তাকেও ওই লিটন সম্প্রতি হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনা হাসপাতালে ডিউটিতে থাকা ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা- কর্মচারিদের খাাবার স্পালাইয়ের কাজটি ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা রয়েছে পরিচালকের কথিত বন্ধু লিটন।
হাসপাতালের সুত্র মতে, গত ১২ জুলাই সকালে নগরীর বয়রা এলাকার এক বৃদ্ধাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়। এসময় রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিচালক নিজেই সেখানে গিয়ে অক্সিজেন না থাকার প্রমান পান। শোনা যাচ্ছে, জরুরি বিভাগের অক্সিজেন নেয়া হয়েছিল হাসপাতালের ক্যাশিয়ারের সেবার জন্য। কিন্তু সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি লাশ নিয়ে রোগীর লোকদের বাইরে চলে যেতে বলেন। এরপরও একজন কর্মচারীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ লিখিয়ে একজন সরকারি নারী কর্মচারী ও ছয়জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেটি অনেকটা ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
এসব বিষয় নিয়ে অবশ্য হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার গতকাল মঙ্গরবার দুপুরে বলেন, লিটন তার বন্ধু বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সে হাসপাতালে আসে, তবে সব সময় বসে থাকে না। করোনা হাসপাতালে আউটসোসিং নিযোজিত কর্মচারিরা সময় মতো ডিউটিতে আসেন না। যার কারনে ৪জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার বন্ধুর ছেলে ইমন তার সরকারি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে অস্বীকার করেন।