খুলনায় এক বছরে এইচআইভি সণাক্ত শিশুসহ ৩৬ : মৃত্যু শিশুসহ ৭

প্রকাশঃ ২০২০-১২-০১ - ১৮:৩৩

খুলনা বিভাগে ২৮৫ আক্রান্ত ব্যক্তি এআরটি সেবা নিচ্ছে

খুলনা অফিস : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে Antiretroviral Therapy (ART) Center থেকে গত এক বছরে ৮২০ জন কে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে সনাক্ত হয় ৩১ জন। পাশাপাশি ৬৮৩৭ জন গর্ভবতী-গর্বত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষায় শিশুসহ ৫ জন সনাক্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় শিশুসহ মারা গেছে ৭ জন। বর্তমানে খুলনা বিভাগে এইচআইভি/এইডস সণাক্তকারী ২৮৫ জন বিনামুল্য এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যার মধ্যে খুলনায় রয়েছে ৯৯ জন। খুলনায় এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার ( ১ লা ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নিব দায়িত্ব ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামুলক না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, কনডম অনীহার কারণে দিনকে দিন এ পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসাপাতালে স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্র ওই সব তথ্য জানা যায়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১লা ডিসেম্বর) সিভিল সার্জন অফিসের উদ্যোগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। এসময় সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ, ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, ডাঃ সাদিয়া মনোয়ারা উষা, সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স ও এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিরা বলেন, এইডস একটি মরণব্যাধি। এইডস প্রতিরোধে সচেতনতাই বেশি জরুরি। আমাদের দেশে এইডস’র প্রকোপ তেমন বেশি না হলেও প্রতিবেশি দেশগুলোতে এর বিস্তারের হার অনেক বেশি। প্রতিবেশি দেশ থেকে যাতে এইডস ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান অতিথিরা। উল্লেখ্য, অনিরাপদ দৈহিক মিলন, এইডস রোগের ভাইরাস রয়েছে এমন রক্ত শরীরে গ্রহণ, অন্যের ব্যবহার করা ইনজেকশনের সূঁচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহারের ফলে এইডস ছড়াতে পারে। এছাড়াও রোগের ভাইরাস বহনকারী মা হতে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় অথবা বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের এইডস হতে পারে। এর আগে জেনারেল হাসপাতাল চত্ত্বরে দিবসটি উপলক্ষে ষ্ট্যান্ডিং র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিতে চিকিৎসক, নার্স, এনজিওসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
খুমেক হাসাপাতালে স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর তুলনায় এ বছরে এইচআইভি/এইডস সণাক্ত কম পাওয়া গেছে। এর কারণ তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর এক মাসে এইডস সণাক্তকারী কিডস সরবরাবহ কোথাও ছিলো না। দ্বীতিয় করোনার কারণে অনেকেই এইচআইভি টেস্ট করতে আসেননি। তবে যারা ইতিমধ্যেই এইডস সণাক্ত হয়েছে তাদেরকে নিয়মিত বিনামূল্য ওষুধ ও সেবা প্রদান করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় খুমেক হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি র‌্যালী বের হবে। পরে হাসপাতালে কনফারেন্স রুমে এইডস প্রতিরোধ ও সচেতনতামুলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী রেজা সেকেন্দার।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসাপাতালে স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্র মতে, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত Antiretroviral Therapy (ART) Center থেকে ৮২০জন কে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৩১ জন এইচ আইভি সংক্রমিত ব্যাক্তি পাওয়া যায়। পাশা পাশি স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা মন্ত্রনালয় আওতাধিন জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় স্টেনদেনিং অফ পিএমটিসিটি সার্ভিসেস প্রকল্প চালু আছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো এইচআইভি সংক্রমিত মা থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রামন প্রতিরোধ করা। ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৮৩৭ জনগর্ভবতী-গর্বত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৩ জন গর্ভবতী/গর্ভত্তর মা এবং ১ জন পাটনার এবং ১ জন শিশুর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়। সে হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩৬ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যাক্তি পাওয়া যায়। যাহার মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ১৫জন মহিলা এবং ৪জন শিশু। এই বছরখুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতায় এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে ৭জন । এর মধ্যে পুরুষ ৪ জন মহিলা ২জন এবং শিশু ১ জন। এছাড়া বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অAntiretroviral Therapy (ART) থেকে ২৮৫ জনে বিনা মূল্যে অহঃরৎবঃৎড়ারৎধষ ঞযবৎধঢ়ু (অজঞ) গ্রহন করছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটে ১৩ জন, বরগুনা ১ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, ফরিদপুরে ২ জন, গোপালগঞ্জে ৭ জন, যশোরে ৭৪ জন, ঝিনাইদাহে ৯ জন, খুলনায় ৯৯ জন, মাদারীপুরে ১ জন, মাগুরায় ৫ জন, নড়াইলে ৩২ জন, পিরোজপুরে ৩ জন ও সাতক্ষিরায় ৩৭ জন।
ওই প্রকল্পের সূত্র মতে, ১৯৮৯ সালে প্রথম বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ধরা পরে। তার পর থেকে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে বাড়তেই থাকে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এইচআভি আক্রন্ত রোগী পাওয়া যায় মোট ৯১৯ জন। তার মধ্যে রহিঙ্গা ১০৫জন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পযর্ন্ত বাংলাদেশে মোট এইচআইভি/ এইডস এর সংখ্যা ৭৩৭৪ জন । এর মধ্যে মারা যায় ১২৪২ জন।
খুমেক হাসপাতালের গাইনী ও প্রসুতি বিভাগের প্রধান ডাঃ সামছুর নাহার লাকী এক সেমিনারে বলেন, প্রত্যেক গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষা আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এইডস পরীক্ষার ব্যাপকতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কম খরচে করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। খুলনায় মুক্তি সেবা সংস্থা (কেএমএসএস) এর আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয়, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যান্তরে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এবং ট্রক চালকদের অবাধে নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত, পুরুষ সমকামী (এমএসএম) বৃদ্ধি, কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে এ অঞ্চলে এইডস’র ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে।