খুলনায় করোনা আতঙ্কে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চেম্বার বন্ধ : বিপাকে সাধারণ রোগীরা

প্রকাশঃ ২০২০-০৩-২৩ - ১৭:৪৪

আজগর হোসেন ছাব্বির : “নভেল করোনাভাইরাস” সংক্রামন হতে পারে এমন আতঙ্কে খুলনার মেডিসিন বক্ষব্যাধীসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বিভিন্ন ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ২ দিন খুলনার বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীরা। এমন ঘটনায় সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। দুর দুরান্ত থেকে আগত অনেকে প্রত্যাশিত চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অপরদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) না থাকায় নিজেদের জীবণের ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাইছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সুত্র জানায়, দেশে চলমান করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ভর করেছে অধিকাংশ চিকিৎসকের মাঝে। যে কারনে গত ২১ তারিখের পর থেকে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা থেকে বিরত আছে। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন জলমা ইউপি এলাকার শামিমা আকতার সন্তানের চিকিৎসায় এসে ডাক্তার না পাওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, আমার ছেলেকে গত ১৬ মার্চ খুলনা মেডিকেলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পার্থ বোসকে (এফ সি পি এস, এম সি পি) বেসরকারী খুলনা প্রিন্স হাসপাতালের চেম্বারে দেখায়। তিনি ধারাবাহিক কয়েকটি টেস্ট করার পরামর্শ দেন। প্রাথমিক পরিক্ষার রিপোর্ট গুলো দেখে নিউমোনিয়া এবং লাঞ্চে পানি জমার কথা জানান। বাকী থাকা সিবিসি সিরাম ট্রিট্রিনাস পরিক্ষা করিয়ে ২২ মার্চ প্রিন্স হসপিটালের চেম্বারে গিয়ে জানতে পারি ডাক্তার বসবেনা। নিরুপায় হয়ে উনার অপর ঠিকানা বসুন্ধারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই। কিন্তু সেখান থেকেও একই বার্তা পাই ডাক্তার বসবেনা। শেষ পর্যন্ত এক পরিচিতজনের সহায়তায় ডক্টরস ক্লিনিকে ডাঃ প্রসেনজিতকে রিপোর্টটি দেখাতে সক্ষম হই। অনুরুপ বিড়ম্বনার কথা জানালেন জেলার কয়রা উপজেলা থেকে আগত এক রোগীর স্বজন। শহরের ইষ্টার ডায়াগনস্টিক, রয়েল ডায়াগনস্টিক, ইউনাউটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঘুরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের না বসার তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকে আবার তাঁদের মোবাইল সংযোগ বন্ধ রেখেছেন। তবে এ সকল ক্লিনিক হসপিটাল থেকে রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিপাকে পড়া রোগী এবং তাদের স্বজনরা বলছেন, আতঙ্কে যদি চিকিৎসকরা পালিয়ে যায় তাহলে রোগীরা যাবে কার কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক চিকিৎসক বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরাও মানুষ, স্ত্রী সন্তান পরিবার অন্য সকলের মত আমাদেরও আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চেম্বারে রোগী দেখার ব্যাপারে পারিবারিকভাবে অনেকটা চাপের মুখে আছি। অপরদিকে নিজেদের নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজসহ সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরাও রোগী দেখতে অনীহা প্রকাশ করছে। বিশেষ করে পিপিই ছাড়া করোনার প্রাথমিক উপসর্গ সাধারণ সর্দি জ্বর কাশির রোগী দেখতে তাদের ঘোর আপত্তির কথা জানা গেছে।