খুলনায় কোয়ারেন্টাইনে ৩০ পিপি ও কিট সংকট

প্রকাশঃ ২০২০-০৩-১৯ - ১১:২৪

আজগর হোসেন ছাব্বির : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে খুলনায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ৩০ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনগুলোতে নেই নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা আর হাসপাতালগুলোতে রয়েছে পিপি ও কিট সংকট, গতকাল বুধবার বিকেলে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত জেলা কমিটির জরুরী সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় আরো জানানো হয় চলতি মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে খুলনায় এসেছেন ২৭৪৬ জন।
গতকাল বুধবার বিকাল ৪ টায় খুলনা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত খুলনা জেলা কমিটির এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এই সংকটে আতংকিত না হয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও দায়িত্বশীলদের সমন্বয়ে জেলা উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত টাস্কফোর্স সমন্বিত ভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করবে। তিনি আরও বলেন করোনা প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং মহানগরীতে জনসচেতনতায় প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। একই সাথে শহরের জনবহুল এলাকা যেমন রেল ষ্টেশন, বাস ষ্ট্যান্ড, নিউ মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ন স্থানে জনসচেতনতা ও তথ্য প্রদানে পোষ্টারিং করা হচ্ছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণস্থানে অনুরুপ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয় পহেলা মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে থাকা আড়াই হাজার মানুষ খুলনা মহানগরীতে এসেছে। এ ছাড়া জেলার ৯ উপজেলায় এ সংখ্যা ২৪৬ জন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া করোনা সংক্রান্ত আপডেট তথ্য সরবরাহে প্রতিটি বিভাগে আলাদা লোক থাকবে। এ সময় তিনি বলেন পরিস্থিতি মোকাবেলার অগ্রীম সতর্ক ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন সংস্থার নির্মিত ভবন গুলো স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভায় জেলা পুলিশ সুপার সফিউল্লাহ বলেন, মহানগরীর হোটেল গুলোকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে। নতুন করে যেমন কোন বিদেশী আসতে পারবেনা তেমনি পূর্বের কেউ থাকলে তাকে কোন ভাবেই হোটেলের নির্দিষ্ট এরিয়ার বাইরে আসতে দেওয়া হবেনা।
তিনি নিজেদের নিরাপত্তায় বিদেশ থেকে আগত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কেউ স্বেচ্ছায় যেতে রাজি না হলে তাকে প্রচলিত আইনের আওতায় বাধ্য করা হবে। বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান গত কয়েকদিনের মাঠের চিত্র তুলে ধরে বলেন, হাসপাতাল গুলোতে পিপি ও কিট সংকট আছে। তা ছাড়া মফস্বলের হোম কোয়ারেন্টাইন গুলো মোটেও নিরাপদ এবং স্বাস্থ্য সম্মত নয়। বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের কমপক্ষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত উদ্দিন স্বাস্থ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারের অন্যান্য বিভাগের হাতে থাকা কিট ও পিপি এবং স্বাস্থ্য সরঞ্জামগুলো জেলা উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সভায় সেই প্রস্তাব গ্রহন করে বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় জানানো হয় সর্ব শেষ তথ্য অনুযায়ী খুলনার দাকোপে ১১, বটিয়াঘাটা ১, তেরখাদা ৬, দিঘলিয়া ২, ডুমুরিয়া ২, পাইকগাছা ১, কয়রা ৪ এবং খুলনা মহানগরীতে ৩ জনসহ মোট ৩০ জন আছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জনবহুল স্থানে বিচরন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইনের কার্যক্রর ব্যবস্থা না থাকলে সরকারীভাবে স্থাপিত কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় আশ্রয় নিতে হবে। সকল ব্যবস্থার সঠিক প্রতিপালন নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যক্ররভাবে প্রতিপালনের বিষয়টি এই কমিটি প্রতিদিন দুইবার করে পর্যবেক্ষন করবে। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরা সুলতানা, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান বাবুলসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।