খুলনায় মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে: আলোচনায় আ’লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-১৪ - ০০:৩৯

খুলনা : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় ৮-৯ মাস। তবে এখন থেকেই শুরু হয়েছে প্রচারণা। কেউ কেউ প্যানা পোস্টার করে আবার কেউ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দু’দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন নতুন নতুন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে। এখন থেকেই তারা চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনে লড়তে। সূত্র জানায়, মেয়র পদে লড়তে খুলনার আওয়ামী লীগের অন্তত ৬ প্রার্থী ও বিএনপির ৩ প্রার্র্থী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টিতে একজন ও ইসলামী আন্দোলনে এক প্রার্থী রয়েছেন। এরা সবাই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু মনোনয়ন না পেলে এদের মধ্য থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রুপিং। এতে বিভক্ত হচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ মেয়র প্রার্থী হলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী আমিনুল হক, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. মো: সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ও নগর যুবলীগের আহবায়ক এ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু। আওয়ামী লীগের ৬ প্রার্থীর ভিড়ে নগরবাসীর লক্ষ্য সাবেক মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের দিকে। তিনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকাকালীন নগরীর দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। যার ফলে নগরীতে এখনো তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু গত নির্বাচনে দলের অন্ত:দ্ব›দ্ব ও হেফাজত ইস্যুতে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থীর কাছে। তবে এবার আলোচনায় সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. মো: সাইফুল ইসলাম ও নগর যুবলীগের আহবায়ক এ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে অন্ত:দন্ধ চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও আলোচনায় রয়েছেন। এ বিষয়ে সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. মো: সাইফুল ইসলাম জানান, ‘খালেক ভাই প্রার্থী না হলে আমি মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। অনেকদিন ধরে নগরবাসীর দাবি আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। সুতরাং আমি এ পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী।’ নগর যুবলীগের আহবায়ক এ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু জানান, ‘খুলনা সিটিতে যোগ্য মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি মেয়র থাকাকালীন খুলনাকে বদলে দিয়েছেন। তবে তিনি যদি প্রার্থী না হন সেক্ষেত্রে আমি দলের মনোনয়ন চাই।’ বিএনপি সূত্র জানায়, মেয়র পদে এবারও মনোনয়ন দাবি করছেন বর্তমান মেয়র ও দলের নগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। কিন্তু হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. শফিকুল আলম মনা ও নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। যদিও সাবেক এমপি মঞ্জু বরাবরই মেয়র পদে লড়তে অনাগ্রহী বলে সূত্র জানায়। সম্প্রতি এক সূত্র জানায়, বিএনপির মধ্যে চলমান বর্তমান বিরোধ নিরসনে সাবেক এমপি আলী আসগর লবীর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে তাকে এমপি পদে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে এবং নগর সভাপতি মঞ্জু মেয়র পদে প্রার্থী হবেন। কিন্তু এ কথাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি জানান, কেসিসি নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। গত নির্বাচনে ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপি’র সকল প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হবে। আর যারা দলের দু:সময়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন তাদের সাথে সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। অপরদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কেসিসি’র মেয়র পদে মুশফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছেন। এছাড়া চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে তাদের দলের নগর সভাপতি আলহাজ্ব মুজ্জাম্মিল হকের নাম ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেককে ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি’র নগর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। নাশকতার দু’টি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালতে রিট করে এক বছর ১৯ দিন পর গত বছরের ২১ নভেম্বর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান তিনি। কিন্তু ক্ষমতা ফিরে পেলেও ইশতিহারে প্রতিশ্রুত ২১ দফা বাস্তবায়নে সফল হননি তিনি।