ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ রোগীদের করোনা চিকিৎসায় উৎসাহ ও সাহষ যোগাতে সরকার চিকিৎসকদের জন্য প্রনোদনা ঘোষনা করছে ঠিকই। কিন্তু ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা মনে হচ্ছে এতেও উৎসাহিত হতে পারেনি। জরুরী বিভাগে রোগীদের সেবা দিচ্ছে নার্স, ব্রাদার ও ওয়ার্ডবয়রা। কর্তব্যরত চিকিৎসক দরজার মাঝে দড়ি টানিয়ে ওপাশ থেকে রোগীর সমস্যা শুনে শরীরের তাপমাত্রা, প্রেসার, পালস না দেখেই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিদিন সার্জিক্যাল কার্মকান্ড সেলাই থেকে শুরু করে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আহত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে নার্স,ব্রাদার ও ওয়ার্ডবয়রা। যদিও সিভিল সার্জন বলছেন চিকিৎসকদের এ আচরণ মোটেই কাম্য নয়। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ ঝালকাীঠ সদর হাসপাতালে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত ২৩ এপ্রিল সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগ। সময় সকাল সাড়ে ১১ টা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম তার রুমে বসা। দরজার মাঝখানে দড়ি বাঁধা। যাতে রোগী চিকিৎসকের কাছে বা রুমে যেতে না পারে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি চেয়ার থেকে উঠে রুমের ভিতরে চলে যান। রোগী এলে রোগের ধরণ শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পাঠাচ্ছেন নার্সদের কাছে। কোন রোগী দড়ি ঘেষে দাড়ালেও তাকে দূরে সরে দাড়াতে বলেন। অপরদিকে জরুরী বিভাগে আগত কাটাছেড়া রোগীদের সেলাই থেকে শুরু করে সার্বিক সেবা দিতে দেখা যায় নার্স,ব্রাদার ও ওয়ার্ডবয়দের। অন্যরুমে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আহত রোগীদের ভ্যাকসিন দিতে ব্যাস্থ সময় কাটাচ্ছে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স মনিন্দ্র নাথ দত্ত।
রোগীর চিকিৎসা সেবায় আপনারা কেন জানতে চাইলে মনিন্দ্র বলেন, বাধ্য হয়ে আমাদের এখন সার্বিক কার্যক্রম সামাল দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সুযোগ সুবিধার ঘোষনা দেয়া হলেও রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা, ভাঙ্গা, কাটা ছেড়ার সেলাই ব্যন্ডেজ, প্রেসার পর্যন্ত মাপতে হচ্ছে আমাদের। ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিলেও আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবছেনা কেহ।
গত ২৪ এপ্রিল ১১ টার দিকে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখাযায় একই চিত্র। এদিন কর্তব্যরত ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. দ্বীণ মোহামদ। এসময় তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন গাবখান ইউনিয়নের রুপসিয়া গ্রামের খালেদা বেগম। তার কান কেটে যাওয়ায় তাকে স্পর্শ না করে প্রেসারসহ কোন কিছু না দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চিকিৎসক সেলাইয়ের জন্য পাঠালেন নার্সের কাছে। এ প্রসঙ্গে রোগী খালেদা জানান, দড়ির ওপাশে বসে আমার ক্ষত না ডাক্তার ওষুধ লিখে সেলাই করাতে পাঠালেন। সরজমিনে ২৫ এপ্রিল সকাল থেকে সন্ধা পর্যান্ত একই চিত্র দেখা গেছে।
সরকার চিকিৎসকদের সুযোগ সুবিধার ঘোষনা সত্বেও দুরত্ব রেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা ডা. দ্বিণ মোহম্মদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ি দরজায় দড়ি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখছি। প্রয়োজন হলে রোগীকে কাছে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যমল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, আমি চিকিৎসক নার্সসহ সবাইকে পিপিই, মাক্স, হ্যান্ড গোলভস দিয়েছি সুরক্ষার জন্য। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসদের দায়িত্বে ত্রুটির সুযোগ নেই। মাঝে দড়ি রেখে রোগী দেখা, সেলাইসহ সার্জিক্যাল কর্মকন্ড না করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এটা মোটেই ঠিক না। বিষয়টি আমি দেখছি।