জয় মহন্ত অলক, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তা হতে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি সেতু নির্মাণ সহ ৪.১০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক প্রশস্তকরণ কাজটির উদ্ভোধন করেছেন রমেশ চন্দ্র সেন, এমপি। এ কাজটি ঠাকুরগাঁওয়ের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের একান্ত চাওয়া ছিল। কাজটি শেষ পর্যন্ত শুরু হবে কি না তা নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা কল্পনা। তবে কাজ শুরু হলেও কেউ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। কারণ এরই মধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। যেসকল অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল ব্যক্তি বা মহল বিশেষের স্থাপনা রক্ষার্থে অন্য পাশের স্থাপনা নির্বিচারে ভাঙ্গার জন্য চিহ্নিতকরণ। আবার এসব ভাঙ্গাভাঙ্গিকে কেন্দ্র করে একটি মহল “ক্ষতিপূরণ” দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। অনেক এলাকাতেই আগে থেকে কোন নোটিশ বা সতর্কতা না দিয়ে মাত্র তিনদিন আগে গিয়ে চিহ্নিত করেই ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়ে এসেছে সড়ক বিভাগের লোকজন। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। সড়ক কতটা প্রশস্ত হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে গোলক ধাঁধা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেয়া তথ্য মতে ডিভাইডারসহ ৫২ ফুট রাস্তা নির্মিত হবে। মাঠপর্যায়ে স্থাপনা চিহ্নিতকরণ কাজের সার্ভেয়ার বলছেন ৬২ ফুট আবার কোথাও বলা হচ্ছে ৭২ ফুট। আবার লোকজন চ্যালেঞ্জ করে বসলে “আমরা কিছু জানিনা” বলেই স্থান ত্যাগ করছেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি হঠাৎপাড়া জলেশ্বরি তলায় সার্ভেয়ার উপস্থিত হয়ে মূল সড়ক থেকে প্রায় ৪০ ফুট দূরে বাসা বাড়িতে লাল দাগ দিয়ে সেগুলি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। লোকজন যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন তখন তারা কোন জবাব না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি অপর এক সার্ভেয়ার এসে নিজেকে সওজ বিভাগের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে একই এলাকার মফিজুল, নাসিরুল, ইয়াছিন, রুস্তম, স্যামুয়েল ডেভিড, মজিবর মাষ্টার, হাকিম সরকার, মৃত মধু উক্লি,স্বপ্না, আব্দুর রাজ্জাক, স¦প্না সহ আরো অনেকের বাড়িতে লাল চিহ্ন দিয়ে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। অথচ রাস্তার দক্ষিণ পাশে তেমন কোন স্থাপনাই চিহ্নিত করা হয়নি। সড়কের মধ্যবিন্দু থেকে সমানভাবে দুপাশে জায়গা নিলে এমন সমস্যার উদ্ভব হতোনা বলে মনে করেন অনেকে। তাঁরা জানান, শহরের চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমে ম্যাপে সড়কটি সোজা দেখা গেলেও এখন সড়কটি অবিশ্বাস্যভাবে আঁকাবাকা করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। যা ব্যাপক অনিয়ম ও ব্যক্তি বা মহল বিশেষের স্থাপনা রক্ষার্থে সার্ভেয়ারগণ মাপযোগ করছেন বলে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন স্থানে জটলা করে আলোচনা করছেন। একই অভিযোগ ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীদের। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩১ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদনে তাদের অভিযোগ বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে গত ০৭ ফেব্রুয়ারি রাস্তার মধ্যবিন্দু চিহ্নিত করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল উত্তরে এবং দক্ষিণে সমান ভাবে জায়গা নেয়া হবে। কিন্তু গত ১১ ফেব্রুয়ারি সার্ভেয়ার এসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৪ ফুট রাস্তা ছেড়ে দিয়ে দক্ষিণ দিকের রেলওয়ে থেকে লিজ নেয়া জায়গার ৪ ফুট বাড়িয়ে স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য চিহ্নিত করণ করে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ দিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন জমি নেই। উক্ত এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, সড়ক সম্প্রসারণ হোক এটা আমরাও চাই এর জন্য যত সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমরা করবো কিন্তু কাউকে বাঁচাতে কাউকে মেরে ফেলতে হবে এ নীতি মানবোনা। তারা আরও বলেন রাস্তার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সমান ভাবে দু’দিকে জমি নেয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি। তা না করে কোন কোন স্থাপনা রক্ষার্থে সড়কটি সাপের মতো আঁকা বাকা করে চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা জমির কাগজপত্র নিয়ে সড়ক বিভাগে ছুটাছুটি করছেন। কিন্তু তাঁরা সেখানে কোন সমাধান পাচ্ছে না। সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর তা গেজেট করে নামজারি হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, গেজেট হয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। গেজেট হতে পারে বা নাও হতে পারে। অফিসের ফাইলে এধরণের কোন কাগজ নেই। শহরের চৌরাস্তা হতে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজটি ঠাকুরগাঁওয়ের সকল শ্রেনির মানুষের প্রত্যাশিত। এরজন্য রাস্তার দুপাশের ব্যবসায়ী এবং বসবাসকারী সাধারণ মানুষ ক্ষতি স্বীকার করে নিতেও রাজি। কিন্তু কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া ভাবে কোথাও ৫ ফুট আর কোথাও ৫০ ফুট উচ্ছেদ করা হবে তা মেনে নিতে তাদের আপত্তি রয়েছে। সুষ্ঠ তদারকির মাধ্যমে সঠিকভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালার ভিত্তিতে উচ্ছেদ কল্পে স্থাপনা চিহ্নিত করার নির্দেশ দানের জন্য জেলা প্রশাসক এবং সংসদ সদস্যের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সাধার মানুষ।