ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুরে সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নৌকার প্রত্যাশায় মরিয়া

প্রকাশঃ ২০২১-০২-০৮ - ১৩:১২

সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া (খুলনা) : আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নে সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মরিয়া। দলীয় প্রতীক ও নমিনেশান নিয়েই চিন্তিত সবাই। যার প্রত্যাশায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে আছেন একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বি।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর ডুমুরিয়া অঞ্চল নানা ভাবে প্রশাংসিত। শিক্ষা, সাংস্কৃতি, ক্রীড়া সবই মিশে আছে এ জনপদে। আছে বিচক্ষণ রাজনীতিও। অঞ্চলের খুব চেনাজানা ও পরিচিত নাম শাহ্পুর। বহু ইতিহাস, ঐতিহ্যে ঘিরে আছে এই শাহ্পুরে। এক সময়ে এই উত্তর ডুমুরিয়া অঞ্চল জুড়েই ছিল অভাব-অনাটনে ভরা। জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের ছিল চরম ভোগান্তি। বর্তমানে এখন তা চোখে পড়ে না। আগেকার তুলনায় মানুষের জীবন জীবিকার মান আকাশ-পাতাল পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের আভাস মিশে গেছে সর্বত্রই। বিশেষ করে নির্বাচন এলেই শুরু হয় তোলপাড়। এবারের নির্বাচনেও রঘুনাথপুর ইউনিয়ন জুড়ে বইছে প্রচার-প্রচারনার হাওয়া। সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা যেন মরিয়া। ভোটারদের নজর কাড়তে ইউনিয়নের সকল হাটবাজার, মোড়ে মোড়ে ছেয়ে গেছে তাদের পোস্টার প্যানায়। তারপরও এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়া সহজ কথা নয়। সম্ভব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপট বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব রয়েছে ইউনিয়নের সর্বত্রই। দলীয় নমিনেশান ও নৌকা প্রতীকই হল মুল বিষয়। তাই প্রচার-পচারণার মাঠে থাকা প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়েই আছেন মহা চিন্তিত। বিগত নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নে এক সময়কার কর্ণধর ছিলেন সাবেক উপজেলা চেযারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মরহুম গাজী আব্দুল হাদী। দলমত নির্বিশেষে প্রায়ত এই নেতার ছিল ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা। মতবাদ ও আদর্শের প্রতীক ছিলেন তিনি। উত্তর ডুমুরিয়া ও গাজী আব্দুল হাদী যেন একই সুতায় গাঁথা। একই সাথে ওই অঞ্চলে তাঁর রজিনৈতিক সহযোদ্ধা ও একান্তজন হিসেবে ছিল অনেকেই। তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান খান শাকুর উদ্দিন। যে ইমেজ কাজে লাগিয়ে বিগত নির্বাচনে খান শাকুর উদ্দিন বিপুল ভোট ব্যাসধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে রাজনীতি করি। বিগত নির্বাচনে দল আমাকে নৌকা দিয়েছিল, তাই জয়লাভ করেছিলাম। জানি না, মানুষের কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছি। সকল বিচার-বিশ্লেষণ জনগণ করবে। আর এবার দলের পক্ষ্যে অনেকেই নৌকা প্রত্যাশা করছে। এখন দলীয় নমিনেশান হল মুল বিষয়। তবে স্পষ্ট কথা হল, আমি কেন্দ্র দখল বা ভোটে জোর করা, আধিপত্য বিস্তার এগুলো বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণই হল সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের রায়ই হল চুড়ান্ত রায়। বিগত নির্বাচন তার বাস্তব প্রমাণ। এবারও আমি নৌকা পেলে জয়লাভ করবো এটাই আমার প্রত্যাশা। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশীর মধ্যে আরও একজন হলেন গাজী আব্দুল হক। তিনি জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সহসভাপতি ও মরহুম গাজী আব্দুল হাদীর ভাইপো। দলীয় নমিনেশান ও দলীয় প্রতীক নৌকার প্রত্যাশায় তিনিও গণসংযোগ ও মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছেন বহু আগে থেকেই। দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার রয়েছে পদচারণা। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন জুড়েই তার পক্ষ্যে উঠেছে গণ জোয়ার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার চাচাজান মরহুম গাজী আব্দুল হাদী ছিলেন আমাদের অবিভাবক। তাঁর নির্দেশ-আদেশ মেনেই আমরা চলতাম। রাজনীতিতে কোনদিন কোন পদ-পদবী চায়নি। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। এই জনপদের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে আছেন তিনি। আমিও সেই পরিবারের সদস্য হয়ে জনমানুষের সাথে মিশে থাকতে চাই। তাই আসন্ন নির্বাচনে দলীয় নমিনেশান প্রত্যাশা করছি। তবে এই ইউনিয়নের চমক প্রার্থী হলেন মনোজিৎ বালা। রাজনীতিতে তার বড় ধরনের পদ-পদবী না থাকলেও আছে ব্যাপক পরিচিতি গণ-জোয়ার। এক সময়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে ব্যবসা ও জন-কল্যাণমুলক কাজে সময় পার করছেন। তিনি ইতোমধ্যে ইউনিয়নের সকল ওলি-গলিতে তার প্যানা পোস্টারের ছেয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে তাকে নিয়ে চা’র টেবিল থেকে শুরু সর্বত্রই হচ্ছে আলোচনা। এবিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নের খেটে খাওয়া ও গরীব অসহায় মানুষের জন্য আমি কাজ করতে চাই। এছাড়াও এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে আমি বিশ্বাসী। আর আমিও এক সময়ে ইউনিয়নে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। পরে ইউনিয়ন যুবলীগ সাথে থেকে এক পর্যায়ে ব্যবসায় জড়িত হই। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নীতি আদর্শে রাজনীতি করি। তাই আমিও নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করছি।
এই ইউনিয়নে বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ্যে তেমন কোন শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে নেই। ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মাস্টার আইয়ুব আহমেদ ও আব্দুর রব আকুঞ্জি এই দুইজনের নাম প্রাথমিক ভাবে শোনা যাচ্ছে। তবে জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা গাজী তফসীর আহমেদ হলেন এই ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনিও এক সময়ে ছিলেন এই ইউনিয়নের কান্ডারি। সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে তারও অনেক সুনাম রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেননি।