ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে চলছে লড়াই

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১৮ - ১৪:৫৬

সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া (খুলনা) : আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ডুমুরিয়া উপজেলার ৩নং রুদাঘরা ইউনিয়নে সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে নিরাপদে বিএনপির আমিরুল। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। খোকন-তৌহিদ দুজনই আছেন শক্ত অবস্থানে।
জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে অন্যতম ইউনিয়ন হল রুদাঘরা। শিল্প-সাহিত্যিক, শিক্ষা ও নান্দনিকতা আর গুণগত দিকই হল এই জনপদের বৈশিষ্ঠ্য। প্রচীন কালে এই অঞ্চলে ছিল ধর্নাঢ্য ও জমিদার গণের বসবাস। এখনো দেখা মেলে তাদের উত্তরসূরী ও বংশধরগণের। এছাড়াও এখানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ মিকশিমিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মধুগ্রাম কলেজ নামের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মধুগ্রাম কলেজটি ইতোপূর্বে সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইউনিয়নের সিমানা ছুঁয়ে আছে কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনার ভরত-ভায়নায় অবস্থিত প্রচীন কালের সেই ভরত রাজা দেঁউল। সব মিলিয়ে শিল্প ও নান্দনিক দিক দিয়ে এই জনপদটি অনেক এগিয়ে। তাই এখানকার জনগণও অনেক রুচিশীলপূর্ণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের ভুমিকা থাকে লক্ষনীয়। এবারের ইউপি নির্বাচনেও তার আভাস ফুটে উঠেছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন কান্ডারি হতে চার প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল খোকন, সাবেক চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ আহমেদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এমএম ইমরান হোসেন এবং বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে আছেন সাবেক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম হালদার। প্রতিদ্বন্দ্বি এই চার প্রার্থীর মধ্যে কে হবেন ইউনিয়ন কান্ডারি? এই নিয়েই চলছে হিসাব-নিকাশ। তবে এরমধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল খোকন। তিনি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের নব গঠিত কমিটির সহ-সভাপতি। এছাড়াও তিনি খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালকসহ একজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার। বিগত নির্বাচনে দলের সমার্থিত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেছিলেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি প্রতীকে আশাবাদী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ৭১ সালে পাক-বাহিনী ও রাজাকাররা এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে আমাদের পরিবারের ওপর। এমনকি তাদের হাতে আমার আপন চাচার মৃত্যু হয়েছিল। সেই থেকে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এই ইউনিয়নে আমি বিগত আরেক পিরিয়ড চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বলতে পারি, এই ইউনিয়নে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এখানকার রাস্তা-ঘাট, স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্টান, খেলার মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির-শশ্মানসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনা কালীন সময়ে আমি নিজে হাতে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে সহায়তা তুলে দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ইউনিয়ন’কে সবুজ ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরপর দুই বার খুলনার মধ্যে সেরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি এইধারা অব্যাহত রাখতে চাই। এবারের নির্বাচনেও আমি দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী। আশাকরি করি দলীয় প্রতীক পেলে আমি আবারও বিজয়ী হয়ে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী অপর প্রার্থী হলেন সাবেক চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ আহমেদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া রাজনৈতিক দিক দিয়ে তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম গাজী আব্দুল হাদীর ভাইপো। কলেজ জীবন থেকেই তার রাজনীতি শুরু এবং তিনিই ছিলেন এক সময়কার কম বয়সী ইউপি চেয়ারম্যান। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি খুব ছোট্ট অবস্থায় অর্থাৎ বুঝতে শিখেই আমার চাচা মরহুম গাজী আব্দুল হাদীর নিকট থেকে শিক্ষা নিয়েই আমি রাজনীতি শুরু করি। যারফলে আমি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। বিগত নির্বাচনেও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাত্র ৭৩ ভোটে পরাজিত হই। আমি দীর্ঘ ৫টি বছর আমার সেই অবস্থান ধরে রেখেছি। তাই আমার বিশ্বাস, উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দ আমার রাজনৈতিক পরিচিতি ও তৃণমুলের অবস্থান বিবেচনা করবেন। আশাকরি, দলীয় প্রতীক নৌকা পেলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
এই ইউনিয়নে নৌকা প্রত্যাশী অপর প্রার্থী হলেন সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এমএম ইমরান হোসেন। তিনি পেশায় কলেজ শিক্ষক। এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির পরেই আমি কলেজ শিক্ষক। ফলে এলাকার তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজ আমার পক্ষেই সব সময়। তাই তাদের উৎসাহে এবারের নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি এবং দলীয় নমিনেশন প্রত্যাশা করছি।
এই ইউনিয়নে বিএনপির একক প্রার্থী হলেন সাবেক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম হালদার। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, রুদাঘরা ইউনিয়নে আমাকে ধানের শীষের প্রার্থী করায় দলের উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে জানাই অভিনন্দন ও আন্তিরিক শুভেচ্ছা। সারাদেশে দলের দুঃসময় হলেও আমাদের ইউনিয়নে সাংগঠনিক অবস্থান অনেক ভালো। আশাকরি নির্বাচন সুষ্ট ও নিরপেক্ষ হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।