দাকোপে খাস খালের জায়গা দখল করে পজেশন বিক্রি

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-২৩ - ১৮:৪৩

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : দাকোপের বানীশান্তা ইউনিয়নে সরকারী জায়গা দখল করে পজেশন বিক্রি, লক্ষ লক্ষ টাকার রাস্তার ইট বিক্রিসহ ভিজিডি ভিজিএফের মালামাল বিতরনে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারী ওই সম্পত্তি অবৈধ দখল ছেড়ে দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দিলেও সেটি উপেক্ষিত। অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিরা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেষা ৯ নং বানীশান্তা ইউনিয়নটি চরম অবহেলিত। বঞ্চিত এই জনপদের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উঠেছে বিস্তর দূর্নীতি অনিয়ম আর অর্থ আতœসাতের অভিযোগ। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, বানীশান্তা বাজার থেকে মনোজ মেম্বরের বাড়ী অভিমুখে যাওয়া পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহ্নত খাস খালটির বাজার অংশের জায়গা অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে। খালের গোড়ার বেশ কিছু অংশ বালি ভরাটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকায় পজেশন বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশ জুড়ে খালের জায়গা দখল করে টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অবৈধ কাজকে জায়েজ করতে দখলে নেওয়া জায়গায় রাসেল স্মৃতি সংসদের একটি সাইন বোর্ড টানিয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জবর দখলের মুলহোতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুদেব কুমার রায়ের নাম উঠে এসেছে। তার সহযোগী হিসেবে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কথিত সভাপতি (বহু বছর আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির) মোকলেস ফকিরসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য এই কাজে জড়িত এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ভরাট হওয়া জায়গাসহ খালের পাশ জুড়ে স্থানীয় সাইফুল ইসলাম, কুদ্দুস, মান্নান, আমেনা বিবি, মোকলেস ফকির, ডাঃ উত্তম, ওয়াসীম শীল, সুরঞ্জন মন্ডল, সেলিম, কালাম বয়াতীসহ আরো অনেকে ১ থেকে ২ লাখ টাকায় পজেশন কিনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দখলদার জনৈক ডিপো ব্যবসায়ী বলেন, আমি পূর্বের দখলদারদের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় ১টি পজেশন কিনেছি। কিসের বৈধতার ভিত্তিতে কিনেছেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে কোন পজেশনের কবলা দলিল বা রেজিষ্ট্রি কাগজ নেই, সকলে আমরা ষ্ট্যাম্পের উপর লেখা পড়ার মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করে আসছি, আমিও সেভাবে কিনেছি। সম্প্রতি দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্টেড আব্দুল ওয়াদুদ সরেজমিন তদন্তে এসে খাস খালের অংশ দখল করার সত্যতা পেয়ে দখলদারদের ওই জায়গা ছেড়ে দিতে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সেই নির্দেশটি উপেক্ষিত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী অফিসার বলেন, মানবিক কারনে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করে সরকারী জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছি। এরপর ও যদি তারা সেটা না করে তাহলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। অপরদিকে ৫ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত বানীশান্তা বাজার হতে লাউডোপ পর্যন্ত ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের উপর নির্মিত ডবল সেলিং ইটের রাস্তার কয়েক লক্ষ টাকার ইট অপসারন করে বিক্রি করে অর্থ আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মেম্বরের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ফিরোজ খা বলেন, পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ইট দিয়ে ভিন্ন রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। বানীশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাস্তার কিছু ইট চুরি হয়েছে, আর বাকীটা ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা সংস্কার, নির্মান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারী খাস জায়গার ব্যাপারে তিনি বলেন আমি কোন পজেশন বিক্রির সাথে জড়িত না, তবে একটি পজেশন নিয়ে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারী জায়গায় রাসেল স্মৃতি সংসদ কার্যালয় নির্মান বৈধ কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন সেটা হয়ত বৈধ না, তবে সেটা আমরা না নিলে অন্যরা দখল করে নিতো এ জন্য করেছি।