দাকোপে হাজার হাজার নারী পুরুষের অংশ গ্রহনে মানববন্ধন

প্রকাশঃ ২০১৮-১০-২৪ - ১৮:১৯

আমরা বাঁচতে চাই” “জীবনের তাগিদে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই

আজগর হোসেন ছাব্বির,দাকোপঃ ভাঙ্গন কবলিত দাকোপের ৩২ নং পোল্ডারে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান বাঁধ নির্মান কাজের সাথে নদী শাসন ব্যবস্থা যুক্ত করে দ্রুত কাজ সমাপ্তির দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্থক্ষেপ কামনা করে সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ পৃথক ৩টি মাবনবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
“আমরা বাঁচতে চাই” “জীবনের তাগিদে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই” এ জাতীয় নানান প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দাকোপের ৫০ হাজার জনগোষ্ঠির দু’টি ইউনিয়নের মানুষ এবার একযোগে মাঠে নেমেছে। তাদের দাবী দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ যখন উন্নত আধুনিক জীবন ব্যবস্থার জন্য রাষ্ট্রের কাছে বরাদ্দ চায়, তখন সহায় স¤বল আর ভিটে মাটি রক্ষায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর দয়া আর অনুগ্রহ চাই। সোমবার সকাল ১০ টায় দাকোপের কামারখোলার জালিয়াখালী ও সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান ও কালাবগী এলাকায় অনুষ্ঠিত পৃথক মাবনবন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা আইলার দুঃসহ স্মৃতি উল্লেখ করে উপরোক্ত কথা বলেন। দুটি ইউনিয়নে চলমান বাঁধ নির্মাণ কাজের বিষয় উল্লেখ করে তারা বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বড় বাজেটের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হলে এলাকাবাসী আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু ওই প্রকল্পে নদী শাসন অর্থাৎ ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা না থাকায় প্রকল্পটি অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বক্তারা বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেদের দাবীর কথা তুলে ধরে বলেন, বাঁধকে রক্ষা করতে হলে একই সাথে ভাঙ্গন রোধের কার্যক্রর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। তা না হলে কোটি কোটি টাকা পানিতে ভেসে যাবে বলে উল্লেখ করেন তারা জানায়। দাকোপের আইলা কবলিত সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়ন ২ টি চারীপাশে নদী বেষ্টিত হওয়ায় ভাঙ্গন, জ্বলোচ্ছ্াস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে দিন দিন মানচিত্র সংকোচিত হয়ে আসছে। আইলার পর এই ২ ইউনিয়নের শত শত পরিবার ভাঙ্গনের কারনে বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাটের রামপাল, ফকিরহাট, বটিয়াঘাটার জলমা, ভান্ডারকোট, পাইকগাছার গড়ইখালী, বেতবুনিয়া ও কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন ২ ইউনিয়নের শত শত পরিবার ভাঙ্গনজনিত কারনে সব হারিয়ে রাস্তার ওপর মানবেতার জীবনযাপন করছে। ৩ হাজার পরিবারের ওপরে গৃহহীন হয়ে যাযাবরের ন্যায় দিনাতিপাত করছে। ঝুঁকির মধ্যে থাকা ২ ইউনিয়নের ৫০ হাজার জনসাধারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য ঘের, মিষ্টি পানির পুকুর, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ৩২ নং পোল্ডার ৫০.৭০ কিলোমিটার পাউবো রাস্তা দ্বারা সংরক্ষিত। কিন্তু আইলা পরবর্তি গত ৯ বছরে এ রাস্তার অধিকাংশ স্থান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। ওই প্রকল্পে সর্বাধীক গুরুত্বপূর্ণ ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিশিষ্ট সমাজসেবক শেখ আঃ মালেকের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার পৃথক ৩টি মাবনবন্ধন কর্মসুচিতে সভাপতিত্ব করেন সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি মোঃ মাসুম আলী ফকির ও কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক পঞ্চনন মন্ডল। মানববন্ধনের উদ্যোক্তা বিশিষ্ট সমাজসেবক সুতারখালী ইউনিয়নের কৃতি সন্তান এম এ মালেক বলেন, বাঁধ নির্মাণের আগে ভাঙ্গন রোধ জরুরী। তা না হলে রাস্তা করে কোন লাভ নেই। ২ দিন পর আইলার মত আবারও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এ ২ ইউনিয়ন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে ৫০ হাজার মানুষের স্থায়ী নিরাপত্তার জন্য বাঁধ নির্মাণের পূর্বে ভাঙ্গন রোধ বা নদী শাসন ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাবনবন্ধন থেকে জোর দাবী জানান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা পরিষদ সদস্য ও সুতারখালী আ’লীগের সহ-সভাপতি কে,এম কবির হোসেন, দাকোপ উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভানেত্রী খাদিজা আকতার, সাংবাদিক গাজী আবুল বাশার, প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক, জি,এম মনিরুজ্জামান, আবু মুসা ঢালী, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আঃ কুদ্দুস গাজী, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আঃ আজিজ সরদার, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফত মিলন, ইউপি সদস্য মিহির রায়, ইউপি সদস্য মোন্তাজ আলী সানা, ইউপি সচিব মধাব চন্দ্র বালা, আ’লীগ নেতা সামছুর রহমান সামু, আবুল হোসেন খান, বাকি ফকির, তরুন সমাজ সেবক আনিসুর রহমান ফকির, আঃ কাদের ফকির, মেশকাত শেখ, বিএনপির নেতা আশিকুর রহমান সোহাগ, ইদ্রিস শেখ, আমিনুর সানা, জি,এম আজিজুল হক, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সারাফাত হোসেন সবুজ, শিশুদের জন্য আমরা সংগঠনের সভাপতি বিল্লাল হোসেন গাজী, সামিনুর রহমান, নাজমুল গাজী, সিসিইসি অমিত কুমার মন্ডল, সিরাজ শেখ, মামুন শেখ, মতিন বিশ্বাস প্রমুখ। উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, এনজিও কর্মী, শিক্ষকসহ হাজার হাজার নারী পুরুষ হাতে ভাঙ্গনরোধের বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। শিবসা তীরবর্তি কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। “আগে চাই ভাঙ্গন রোধ, এরপর চাই রাস্তা নির্মাণ”। ঘরবাড়ি ছাড়বনা, ভাঙ্গনরোধ ছাড়া দ্বিতীয় কথা মানবনা। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি চাই, ভাঙ্গনরোধের সমাধান চাই।