নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পর বাজার মনিটরিং!

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-২২ - ১৪:২৪

কামরুল হোসেন মনি : পবিত্র রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে আরও মাস খানেক আগে থেকেই নানা অজুহাতে ক্রমান্বয়ে সব পণ্যেও দাম দফায় দফায় বাড়ানো হয়। এবারও তাই হয়েছে। বাড়তি দামে প্রায় সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, মুরগি, মাছ ও সব্জি বিক্রি হচ্ছে। ৪৫-৫০ টাকার নিচে বাজারে কোন সব্জি বিক্রি হচ্ছে না। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি, আটা, ময়দা পাইকারিতে কেজিতে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে রমজানের আগে সব ধরনের পণ্যের অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বসে আছেন। দাম বেড়ে যাওয়ার পর বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং তোরজোর শুরু হয়। বাজারের দৃশ্যমান স্থানে পণ্যের মুল্য তালিকা প্রদর্শণের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। দাম বৃদ্ধির পর কিসের জন্য দারকার বাজার মনিটরিং এমন প্রশ্ন সাধারণ ক্রেতাদের।
শুক্রবার নগরীর কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে ৪৫-৫০ টাকার নিচে কোন সব্জি বিক্রি হচ্ছে না। কাচা মরিচের ঝাঝ বেড়েই চলেছে। প্রকার ভেদে কাচা ঝাল কেজিতে ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনিয়া পাতা ৮০-১০০ টাকা উচ্ছে ৮০ টাকা, বেগুন ৪৫-৫০ টাকা, বরবটি ৪৫-৫৫ টাকা, সীম ৬০ টাকা, খিরই ৪০-৪৫ টাকা, ঢেড়শ ৪৫-৫০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, কাচা আম  (ছোট) ৫০ টাকা, কাগজী লেবু হালি ২০ টাকা, লাউ ২৫-৩০ টাকা ও টমেটো ৪৫-৬০ টাকায় কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়। একেক বাজারের দামও একেক রকম।
শেখপাড়া বাজারে ক্রেতা সামীমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ এ প্রতিবেদককে বলেন, রমজানের আসা আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা সব ধরনের দাম আগে থেকেই বাড়িয়ে বসে আছেন। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং তোরজোর শুরু হবে। যাতে দাম না বাড়ে। সব জিনিসের দাম বেড়েই বসে আছে, এখন বাজার মনিটরিং এর দরকার আছে বলে আমি মনে করিনা। এমনই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ওই গৃহবধূ। ক্রেতার এই কথার সাথে একমত পোষণ করেছেন নিত্র প্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রেতারা। মুদি পণ্যের বিক্রেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, মোকাম থেকে পণ্যে কিনে এনে আমরা খুচরা দামে ২-১ টাকা লাভে বিক্রি করি। রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। যা বাড়ার তা আগেই বেড়ে গেছে। ব্যবসা যা হওয়ার তাও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রমজান শুরুর প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই পাইকারি-খুচরা পর্যায়ে সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। দাম বাড়ার এই ধারা রমজানের এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত চলবে। আর রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম বাড়ে না। এরপর পুরো রমজান মাস জুড়ে বাজার মনিটরিং হলেও কোন ক্ষতি নেই। দাম বাড়া বা কমার ব্যাপারে আমাদের মাথা ব্যাথাও নেই।
এই বিক্রেতা জানান, ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ রমজানের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে শুরু করেছেন। কেউ শববরাতের সাথে রমজানের বাজারও সেরে ফেলছেন। যার মধ্যে ছোলা, চিনি ও ভোজ্যতেলের আইটেম বেশি।  ক্রেতা মিজানুর জানান, ২-৩ দিন আগে পটল ৮০-৯০ টাকায় কেজিতে কিনেছি। গত বছর এই সব্জি ২০-৩০ টাকার ওপরে যায়নি। মাছ-মুরগীর দামও বেড়ে গেছে। সাদা ও লাল ডিম (হালি) ৩২ টাকা  ও দেশী হাস ও মুরগি ডিমের হালি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগী ব্যবসায়ীরা জানান, বয়্রলার মুরগী কেজিতে ১৫০ বিক্রি হচ্ছে। এর সপ্তাহ খানেক আগে বিক্রি হইছে ১৩০ টাকার মধ্যে। কক বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা।
মুদি দোকানদার মোঃ জুয়েল বলেন, ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, চিনি, আটা-ময়দা, ছোলার ডাল, ছোলা বেসন পাইকারিতে কেজিতে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পাইকারি হিসেবে (ছোলা  দেশী) মান ভেদে ৮০-৮৪ টাকা, চিনি ৫২ টাকা, ময়দা (উন্নত মানের) ৩৬ টাকা, আটা (লুজ) ২৮-৩০ টাকা, সোয়াবিন তেল ৮৪ টাকা ও পামওয়েল ৬৫ টাকা পাইকারি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ওই বিক্রেতা বলেন, হঠাৎ করে ময়দার দাম বস্তা প্রতি ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাইকারি কাচা বাজার থেকে খুচরা বাজারে কাচা তরকারির দ্বিগুন থেকে তিনগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন কেসিসি পাইকারি কাচা বাজারের বিক্রেতা মোঃ ফারুক জানান, ঢেড়শ পাইকারি কেজিতে বিক্রি হয় ২৫-২৭ টাকা, আগের দিন দাম ছিলো ১৭-১৮ টাকা। পটল মান ভেদে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা ও উচ্ছে ৫০-৫২ টাকায় কেজিতে পাইকারিভাবে এই আড়তে বিক্রি করা হয়।
এদিকে রমজানের দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাজারে দৃশ্যমান স্থানে পণ্যের মুল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জোর দেয়া হয়। গত ১৬ এপ্রিল আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে  এক মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। সভায় জানানো হয়, অন্য দেশে ধর্মীয় উৎসবের সময় পণ্যের মূল্য কমানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বৃদ্ধি পায়। ধর্মীয় কার্যক্রম, রোজা পালনে কারো যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চাঁদাবাজির ফলে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এটা বন্ধ করতে হবে। কাঁচা বাজারে পণ্য ও মাছের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। টিসিবি যথেষ্ট পণ্য মজুদ করেছে যা রমজান মাসে বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে। মেয়াদ উর্ত্তীণ খেজুরসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী যেন বাজারে না আসে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।